বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ফিরে দেখা―ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও দেশের ক্ষমতা হস্তান্তর

 আমার স্কুলের ইতিহাসের স্যার ছিলেন মুরুলি স্যার। তিনি খুব সুন্দর করে ইতিহাস পড়াতেন।একদিন তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে ক্লাসে  আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু সেই দিনের আলোচনার  সব কিছু মনে রাখতে না পারলেও একটি কথা আমার আজও মনে পড়ে। সেটি হল " বণিকের মানদন্ড দেখা দিল রাজদণ্ড রূপে।"

আমরা সকলেই জানি যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে শুধুমাত্র ব্যবসা করতে এসেছিল। কিন্তু কালক্রমে সেই কোম্পানিই গোটা ভারতের শাসন ক্ষমতা দখল করেছিল।  দেশকে শোষণ করে আখের ছিবড়ায় পরিণত করেছিল।  বণিকের মানদন্ডকে রাজদণ্ডে পরিণত করতে সাহায্য করেছিল,আমাদের দেশেরই মুষ্টিমেয় ক্ষমতাশালী, স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি। 


 দেশের মানুষ ইতিহাস থেকে কিছুই শিক্ষা নেয় নি।  শিক্ষা নিলে আজ দেশের এই করুন অবস্থা হত না। 


বর্তমানেও তো স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক ক্ষমতাশালী ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। এরাই দেশের সম্পত্তি হস্তান্তর করে শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আবার শিল্পপতিরা জনগণের ঘাড় মটকে তাদের কোষাগারে কোটি কোটি টাকা সঞ্চয় করে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলছে।


যেদিন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসা করতে ভারতে এল। সেদিন কোনও ভারতীয় কি জানতো সেই কোম্পানিই একদিন ভারতের দন্ড মুন্ডের কর্তা বিধাতা হয়ে উঠবে! 


বাংলায় একটা প্রবাদ আছে। "গরিবের কথা বাসি হলে মিঠা লাগে।"

মিলিয়ে দেখবেন, এভাবে চললে কয়েক বছর পর আম্বানি, আদানি প্রভৃতি শিল্পপতিরা গোটা দেশের ক্ষমতা দখল করবেই। আর তারপর ঘটবে মিরাকেল! আখ কলে যেভাবে আখ পেষায়(মাড়াই) করা হয়, সেভাবেই জনগণকে পিষে মারবে। তখনই সাধারণ মানুষের চেতনা ফিরবে। স্পষ্ট বুজতে পারবে দেশের বিশ্বাসঘাতক কারা ছিল?? 


@জামাল আনসারী

24/09/2020



দেশের আইন কি মাকড়সা জালের মতো?

 বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় মাকড়সা জাল দেখেছো। কি সুন্দর বুনন! তাই না। কিন্তু এই জাল হল ছোট ছোট পোকা- মাকড় ধরার ফাঁদ। জালের সংস্পর্শে কোনো ছোট পোকা এলেই সেই জালে জড়িয়ে পড়ে। আর যদি একবার জালে আটকে যায়, তাহলে  পোকার চৌদ্দ গুষ্টির সাধ্য নেই, সেই অতিসূক্ষ জালের তীব্র আকর্ষণ  ছিন্ন করে ,পালিয়ে বাঁচে। তবে মজার ব্যাপার হলো এই যে, মাকড়সা জালে কখনও কোনো হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক, আটকে পড়ে না। কারন তাঁরা তাদের পেশী শক্তি দ্বারা অতি সহজেই জালের বন্ধন ছিন্ন করে,অবাধে,নির্ভয়ে বিচরণ করতে পারে।


দেশের আইন হচ্ছে অনেকটা মাকড়সার জালের মতো।ছোট্ট কিছু পড়লে আটকে যায়, কিন্তু বড়ো কিছু জালে পড়লে জাল ছিঁড়ে ঠিকই বেরিয়ে আসে।তাই দেশের আইন দিয়ে খেটে খাওয়া, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত,গরীব মানুষ গুলোকে বিনা বিচারে, বিচারের নামে প্রহসনে দিনের পর দিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।কিন্তু ললিত মোদি, নীরব মোদি,বিজয় মালিয়ার মতো  মহান দেশপ্রেমিক(!) মানুষরা সেই আইনের জাল ছিঁড়ে অনায়াসে বেরিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারে। দেশের আইন, আদালত, বিচার ব্যবস্থা ,CBI সম্মিলিত ভাবে চেষ্টা করেও পালিয়ে যাওয়া  ধনকুবের, শিল্পপতিদের টিকি পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেন না। কেন??একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই সহজেই বুঝতে পারবে, নেতা, মন্ত্রীরা হাজার অন্যায়- অত্যাচার, দুর্নীতি, খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি করলেও পেশী শক্তি দ্বারা  ওই আইন নামক মাকড়সা জাল ছিঁড়ে ঠিকই বেরিয়ে যায়। 


এক বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনের আগে একশো ত্রিশ কোটি মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সরকার গঠন করলে, বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা দেশে নিয়ে এসে দেশের কোটি মানুষের উন্নয়ন করবে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি যে ক্রমশ রসাতলে যেতে বসেছে, তবুও বিদেশের একটিও কালো টাকা কি দেশে এসে পৌঁচেছে। না পৌঁছে নি। আর  কোনোদিনই ঐ কালো টাকা দেশে আনার কোনো ব্যবস্থায় নেওয়া হবে না। কারন সেই কালো টাকার মালিক তো আর গরিব নয়। সব  ধনকুবের, শিল্পপতি, নেতা, মন্ত্রীদের টাকা। সে হোক না কালো টাকা। তাতে কি! ঐ যে আগেই বলেছি ।দেশের আইন নামক মাকড়সা জালে তারা কোনোদিনই আটকে পড়ে না। তারা আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। 

দেশের আইন তাদের জন্য নয়। দেশের আইন গরিব মানুষের জন্য....গরিব মানুষদের মারার জন্য......

মিলিয়ে দেখবে কোনো গরিব চাষি ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া মাত্র হাজার দশের টাকা ঋণ পরিশোধ করতে না পারার জন্য জেল খাটতে বাধ্য হয়।কিন্তু ললিত মোদি, নীরব মোদি, বিজয় মালিয়া... এদের কত হাজার কোটি টাকা ভারতীয় ব্যাঙ্কে ঋণ আছে!! এখনও সেই টাকা কেউ পরিশোধ করে নি।তবুও তাদের জেল হয় না। কেন??

যারা হাজার কোটি টাকা চুরি করে আছে তাদের জেল হয় না, কিন্তু কোনো মানুষ না খেতে পেয়ে দোকানে সামান্য রুটি চুরি করার অপধধে জেল হয়।

আবার সবাই বলে দেশের আইন নাকি সবার জন্য সমান ! কোন মানদণ্ডে দেশের আইন সবার জন্য সমান তা আজও আমার মাথায় ঢোকে নি।

(বিঃ দ্র : আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আমার পূর্ন আস্থা আছে)

©জামাল আনসারী

30/09/2020