বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

মোদী সরকার কি কৃষক দরদী সরকার ?


কেন্দ্রের মোদি সরকার কি কৃষক-শ্রমিক দরদী সরকার??

জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার যে সবসময় জনগণের সরকার হবে, তা নাও হতে পারে।

কেন্দ্রের মোদি সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার। কিন্তু দেখুন সেই সরকার যতগুলো নতুন আইন এনেছেন ।তার একটাও কি জনগণের ভালোও জন্য....??
কেন্দ্রের আনা কৃষি বিল― কৃষক বিরোধী বিল।
কেন্দ্রের আনা নাগরিকত্ব বিল ― ভারতের নাগরিক বিরোধী।
কেন্দ্রের আনা চিকিৎসা বিল ― আধুনিক চিকিৎসা বিরোধী।
তাহলে এই আইন গুলো কাদের ভালোর জন্য??

কৃষি বিল যদি কৃষকদের মঙ্গলের জন্য, কৃষকদের ভালোর জন্য হতো , তাহলে দেশব্যাপী এতো কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন হত না। ?কৃষি বিলের বিরুদ্ধে দেশের কৃষকরা সম্মিলিত ভাবে আন্দোলনে নেমেছে। তাহলে কার স্বার্থে মোদি সরকার এই কৃষি বিল পাশ করল??

শীতকালে  নেতা মন্ত্রীরা যখন লেপের নীচে আরামে নিদ্রামগ্ন ।সেই সময় শীতের ঠান্ডা উপেক্ষা করেই দিল্লির রাজপথে দিন রাত্রি এক করে  কৃষকরা কালা আইনের বিরোধিতা করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোটি কোটি মানুষ এই কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছে। অনেকে সরকারের দেওয়া সম্মানীয় উপাধি , পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে এই কৃষি আইনের প্রতিবাদ করছে। তবুও মোদি সরকারের  কিছু আসে যায় না।
কারন মোদি সরকার গরিব বিরোধী সরকার।
মোদি সরকার কৃষক বিরোধী সরকার।
মোদি সরকার শ্রমিক বিরোধী সরকার।
মোদি সরকার আদিবাসী বিরোধী সরকার।
মোদি সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিরোধী সরকার।
মোদি সরকার দলিত বিরোধী সরকার।

তাই কৃষক আন্দোলন এক মাস পেরিয়ে গেলেও মোদিজী কৃষকদের প্রতি নূন্যতম সম্মান জানিয়ে আলোচনায় একবারও  বসেনি। কৃষকের ন্যায্য দাবিকে মূল্য দিয়ে কৃষক বিল প্রত্যাহার করে নি।
তবে হ্যাঁ। মোদিজী দেশের অন্নদাতা কৃষকদের কাছে না গেলেও  তাঁর সরকারের প্রাণভোমরা আম্বানির ছেলে না নাতি কোন নার্সিংহোমে হয়েছে, সেখানে গিয়েছিলেন। আর যাবেই না কেন?? দেশের ধনকুবেররাই তো সরকারের নিয়ন্ত্রক!! 

অতিমারি - মহামারিতে দেশের মানুষ সর্বস্বান্ত। ঘরে ঘরে অর্থকষ্ট। কৃষক- শ্রমিক- যারা দিন আনে দিন খাই, সেই সমস্ত মানুষের যে কি কষ্টে দিন যাচ্ছে! তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই ভালো জানে। অতিমারি ক্লিষ্ট সময়ে, দেশের অর্থনীতি যখন প্রায় কোমায় চলে গেছে,সেই সময়  এক হাজার কোটি টাকা বাজেট পেশ করে নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কার স্বার্থে??

©জামাল আনসারী
16/12/2020



ভারতের কৃষকরা কি দেশদ্রোহী ?

ভারতের কৃষকরা কি দেশদ্রোহী??

ভারতের 70% মানুষ কৃষিজীবী। কৃষিই তাদের বাঁচার একমাত্র রসদ। যে বছর ভালো ফসল হয়, সে বছর কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আর ভালো ফসল না হলে কৃষকের মাথায় হাত!! কি করে খেয়ে পরে দিন যাবে সেই চিন্তায় দিন কাটে,রাত কাটে। সাধারণত কৃষকরা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের মধ্যে থাকে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের হাতে না মেরে ভাতে মারার জন্য  কৃষক বিরোধী বিল এনেছে। এরপরের কি কৃষকরা চুপ করে থাকবে??

দেশের কৃষকরা সম্মিলিত ভাবে সারা দেশব্যাপী এই কালা কৃষক আইনের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছে। দিল্লির রাজপথে খোলা আকাশের নীচে প্রচন্ড শীতের দুঃখ কষ্ট সহ্য করেই  লক্ষ লক্ষ কৃষকরা আন্দোলনে সামিল হয়েছে ।এই আন্দোলন আজ 30 দিনে পড়ল।  এই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি লক্ষ্য করে মোদী সরকারের দু চোখের ঘুম উড়ে গেছে। তাই গোদি মিডিয়া সরকারকে বাঁচাতে বলছে কৃষকরা দেশদ্রোহী। আসলে দেশের যারা ভালো চায়, দেশকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে, তারাই এখন সরকারের চোখে দেশদ্রোহী, আর যারা দেশের কোটি কোটি টাকা লুট করছে আর বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে, তারায় দেশপ্রেমিক।

©জামাল আনসারী
16/12/2020



বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০

উত্তরপ্রদেশের দলিত কিশোরী মনীষা বাল্মীকি কি ন্যায্য বিচার পাবে??

 মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে উত্তরপ্রদেশের ভোগী(বেশির ভাগ সচেতন ভারতীয় নাগরিক তাই বলেন) আদিত্যনাথ কতখানি যোগ্য তা আজ দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার । তবুও যারা এখনও গোমূত্রের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে দিবানিদ্রায় মগ্ন, তারা দেখতে পাবে না। কারণ তারা নিশাচারী। তাদের গোপন কাজকর্ম (কুকর্ম) সফল করতে রাতের অন্ধকারেই উপযুক্ত। 


মাত্র কয়েক বছরের সুশাসনে গোটা উত্তরপ্রদেশটাকেই যোগী রাম রাজ্য বানিয়ে ফেলেছে। ভারতের ক্রাইম রেকর্ড বলছে, গোটা ভারতের মধ্যে যোগীর রাজ্য নারী ধর্ষণের মুক্তাঞ্চলে পরিনত হয়েছে। ধর্ষণের রাজধানী। আর হবেই না কেন?  রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় বড় বড় নেতাদের আশীর্বাদে বেড়ে ওঠে এক একজন গ্যাংস্টার। সত্যি বলতে এই গ্যাংস্টার রাই রাজনৈতিক দলের মেরুদন্ড। তারাই হচ্ছে যত কুকর্মের নাটেরগুরু।


কিছু কিছু ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেই, তখন জানা যায়,ফল্গুধারার মতো দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি কতদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ঊনিশ বছরের দলিত তরুণী মনীষা বাল্মীকির ধর্ষণের ঘটনা তারমধ্যে একটি। এটাকে শুধুমাত্র ধর্ষণের ঘটনা বললে হবে না। তরুণী বোনটির প্রতি অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বীভৎস, ভয়াবহ ছিল যে সোশাল মিডিয়া বা টিভিতে শুনে কোনও সুস্থ নাগরিক স্থির থাকতে পারবে না।  জানা যাচ্ছে এই ধর্ষণের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের চারজন উচ্চবর্ণের ছেলে জড়িত। যে নামগুলো প্রকাশ্যে এসেছে, সেই কুলাঙ্গাররা হল,লবকুশ, সন্দীপ, রবি আর রামু। তারা চারজনই ধর্ষণের পর প্রমান লোপাটের চেষ্টা করেছে। তাই তারা প্রথমেই ঠান্ডা মাথায় দলিত কিশোরী মনীষা বাল্মীকিকে  হত্যা করে। জিভ পর্যন্ত কোনো ধারালো অস্ত্রের দ্বারা কেটে ফেলে। ধর্ষকদের পাশবিক নির্যাতনে মেয়েটির কন্ঠনালী প্রচন্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেষে পনেরো দিন পর বেঁচে থাকার লড়াইয়ে  হার মানেন মনীষা বাল্মীকি। 


এমন নিকৃষ্টতম ধর্ষণের ঘটনায় গোটা দেশ অপরাধীদের বিচার চেয়ে উত্তাল।  সবাই দোষীদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি চাই।  হ্যাঁ আমিও চাই। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি। অনেকে বলেন, দেশে কঠিন আইন আনতে হবে। তবেই ধর্ষণ কমবে। নির্ভয়া কাণ্ডের পর নতুন আইন তৈরি হল। কিন্তু ধর্ষণের সংখ্যা কমে নি।তাই আইন এনে কিছুই হবে না। দরকার মানসিকতা পরিবর্তন।তবে আমার ব্যক্তিগত মত, ধর্ষণের মতো জঘন্যতম কাজে জড়িতদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কাজ হবে না।তাদের প্রকাশ্যে অন্ডকোষ সমেত লিঙ্গ কেটে ফেলতে হবে। তবেই যদি কিছু কাজ হয় তো হবে।


আসল নাটক শুরু হল এরপর। আমরা যতই শাস্তি চাই, শাস্তি চাই বলে চিৎকার করি না কেন! যারা অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার অধিকারী। তারা কোনো এক অদৃশ্যে আঙ্গুলি নির্দেশে  অপরাধীদের আড়াল করার জন্য আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। কারন তারা উচ্চবর্ণের। তাই গোদি মিডিয়া চুপ। আইটি সেল চুপ। শাসকের কাছে বুদ্ধি বন্ধক রাখা বুদ্ধিজীবীরা চুপ।কারন দোষীদের মধ্যে একজনের নামও মুসলিম নেই। জটিল ভগাংশের অংক না কোষলেও তারা জানে এতে তাদের লাভ নেই। তাই হৈ চৈ করে প্রতিবাদ করে কি হবে? হায় রে বুদ্ধিজীবী!!


অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সুপার ভিকরান্ত ভির তার তদন্ত করে তার রিপোর্ট এ জানিয়েছে, মনীষা বাল্মীকিকে আদৌ ধর্ষণ করা হয়নি। কারন মেয়েটির শরীরে কোনরূপ ধর্ষণের বা শ্লীলতাহানির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাছাড়া মেয়েটির জিভ নাকি কেটে ফেলা হয়নি ।সেটি অক্ষত আছে।  মেরুদন্ডও নাকি ভেঙে যায় নি। বাহ্ রে বাহ্ পুলিশ সুপার!!


এতকিছু জানার পরেও অপরাধীদের কঠিন শাস্তি চাইছি।তবে ঐ যে ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। আমারও ভয় হয়, কি জানি  মনীষা বাল্মীকি ন্যায্য বিচার পাবে কিনা! কারন টাকার কাছে, ক্ষমতার কাছে ন্যায্য বিচার পাওয়ার আশা এই পোড়া দেশে খড়কুটোর মতো ভেসে যায়।


তবুও আশা রাখতে হয়।একদিন দোষীদের শাস্তি হবেই।

#justiceformanishabalmiki

©জামাল আনসারী

01/10/2020



বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ফিরে দেখা―ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও দেশের ক্ষমতা হস্তান্তর

 আমার স্কুলের ইতিহাসের স্যার ছিলেন মুরুলি স্যার। তিনি খুব সুন্দর করে ইতিহাস পড়াতেন।একদিন তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে ক্লাসে  আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু সেই দিনের আলোচনার  সব কিছু মনে রাখতে না পারলেও একটি কথা আমার আজও মনে পড়ে। সেটি হল " বণিকের মানদন্ড দেখা দিল রাজদণ্ড রূপে।"

আমরা সকলেই জানি যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে শুধুমাত্র ব্যবসা করতে এসেছিল। কিন্তু কালক্রমে সেই কোম্পানিই গোটা ভারতের শাসন ক্ষমতা দখল করেছিল।  দেশকে শোষণ করে আখের ছিবড়ায় পরিণত করেছিল।  বণিকের মানদন্ডকে রাজদণ্ডে পরিণত করতে সাহায্য করেছিল,আমাদের দেশেরই মুষ্টিমেয় ক্ষমতাশালী, স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি। 


 দেশের মানুষ ইতিহাস থেকে কিছুই শিক্ষা নেয় নি।  শিক্ষা নিলে আজ দেশের এই করুন অবস্থা হত না। 


বর্তমানেও তো স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক ক্ষমতাশালী ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। এরাই দেশের সম্পত্তি হস্তান্তর করে শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আবার শিল্পপতিরা জনগণের ঘাড় মটকে তাদের কোষাগারে কোটি কোটি টাকা সঞ্চয় করে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলছে।


যেদিন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসা করতে ভারতে এল। সেদিন কোনও ভারতীয় কি জানতো সেই কোম্পানিই একদিন ভারতের দন্ড মুন্ডের কর্তা বিধাতা হয়ে উঠবে! 


বাংলায় একটা প্রবাদ আছে। "গরিবের কথা বাসি হলে মিঠা লাগে।"

মিলিয়ে দেখবেন, এভাবে চললে কয়েক বছর পর আম্বানি, আদানি প্রভৃতি শিল্পপতিরা গোটা দেশের ক্ষমতা দখল করবেই। আর তারপর ঘটবে মিরাকেল! আখ কলে যেভাবে আখ পেষায়(মাড়াই) করা হয়, সেভাবেই জনগণকে পিষে মারবে। তখনই সাধারণ মানুষের চেতনা ফিরবে। স্পষ্ট বুজতে পারবে দেশের বিশ্বাসঘাতক কারা ছিল?? 


@জামাল আনসারী

24/09/2020



দেশের আইন কি মাকড়সা জালের মতো?

 বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় মাকড়সা জাল দেখেছো। কি সুন্দর বুনন! তাই না। কিন্তু এই জাল হল ছোট ছোট পোকা- মাকড় ধরার ফাঁদ। জালের সংস্পর্শে কোনো ছোট পোকা এলেই সেই জালে জড়িয়ে পড়ে। আর যদি একবার জালে আটকে যায়, তাহলে  পোকার চৌদ্দ গুষ্টির সাধ্য নেই, সেই অতিসূক্ষ জালের তীব্র আকর্ষণ  ছিন্ন করে ,পালিয়ে বাঁচে। তবে মজার ব্যাপার হলো এই যে, মাকড়সা জালে কখনও কোনো হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক, আটকে পড়ে না। কারন তাঁরা তাদের পেশী শক্তি দ্বারা অতি সহজেই জালের বন্ধন ছিন্ন করে,অবাধে,নির্ভয়ে বিচরণ করতে পারে।


দেশের আইন হচ্ছে অনেকটা মাকড়সার জালের মতো।ছোট্ট কিছু পড়লে আটকে যায়, কিন্তু বড়ো কিছু জালে পড়লে জাল ছিঁড়ে ঠিকই বেরিয়ে আসে।তাই দেশের আইন দিয়ে খেটে খাওয়া, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত,গরীব মানুষ গুলোকে বিনা বিচারে, বিচারের নামে প্রহসনে দিনের পর দিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।কিন্তু ললিত মোদি, নীরব মোদি,বিজয় মালিয়ার মতো  মহান দেশপ্রেমিক(!) মানুষরা সেই আইনের জাল ছিঁড়ে অনায়াসে বেরিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারে। দেশের আইন, আদালত, বিচার ব্যবস্থা ,CBI সম্মিলিত ভাবে চেষ্টা করেও পালিয়ে যাওয়া  ধনকুবের, শিল্পপতিদের টিকি পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেন না। কেন??একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই সহজেই বুঝতে পারবে, নেতা, মন্ত্রীরা হাজার অন্যায়- অত্যাচার, দুর্নীতি, খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি করলেও পেশী শক্তি দ্বারা  ওই আইন নামক মাকড়সা জাল ছিঁড়ে ঠিকই বেরিয়ে যায়। 


এক বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনের আগে একশো ত্রিশ কোটি মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সরকার গঠন করলে, বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা দেশে নিয়ে এসে দেশের কোটি মানুষের উন্নয়ন করবে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি যে ক্রমশ রসাতলে যেতে বসেছে, তবুও বিদেশের একটিও কালো টাকা কি দেশে এসে পৌঁচেছে। না পৌঁছে নি। আর  কোনোদিনই ঐ কালো টাকা দেশে আনার কোনো ব্যবস্থায় নেওয়া হবে না। কারন সেই কালো টাকার মালিক তো আর গরিব নয়। সব  ধনকুবের, শিল্পপতি, নেতা, মন্ত্রীদের টাকা। সে হোক না কালো টাকা। তাতে কি! ঐ যে আগেই বলেছি ।দেশের আইন নামক মাকড়সা জালে তারা কোনোদিনই আটকে পড়ে না। তারা আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। 

দেশের আইন তাদের জন্য নয়। দেশের আইন গরিব মানুষের জন্য....গরিব মানুষদের মারার জন্য......

মিলিয়ে দেখবে কোনো গরিব চাষি ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া মাত্র হাজার দশের টাকা ঋণ পরিশোধ করতে না পারার জন্য জেল খাটতে বাধ্য হয়।কিন্তু ললিত মোদি, নীরব মোদি, বিজয় মালিয়া... এদের কত হাজার কোটি টাকা ভারতীয় ব্যাঙ্কে ঋণ আছে!! এখনও সেই টাকা কেউ পরিশোধ করে নি।তবুও তাদের জেল হয় না। কেন??

যারা হাজার কোটি টাকা চুরি করে আছে তাদের জেল হয় না, কিন্তু কোনো মানুষ না খেতে পেয়ে দোকানে সামান্য রুটি চুরি করার অপধধে জেল হয়।

আবার সবাই বলে দেশের আইন নাকি সবার জন্য সমান ! কোন মানদণ্ডে দেশের আইন সবার জন্য সমান তা আজও আমার মাথায় ঢোকে নি।

(বিঃ দ্র : আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আমার পূর্ন আস্থা আছে)

©জামাল আনসারী

30/09/2020



বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০২০

রবীন্দ্রনাথ

 রবীন্দ্রনাথ

by জামাল আনসারী


পঁচিশে বৈশাখ বাঙালির হৃদয়ে

      এক স্মরণীয় নাম ।

আকাশে বাতাসে মুখরিত, তব জয়গানে,

      বিশ্বকবি ,জন্মদিনে লহ প্রণাম।


তুমি শুধু হিন্দু, মুসলমানের কবি নয়, 

    মানুষের কবি,  মুক্তমনের কবি ।

ধর্মের সংকীর্ণতার নাগপাশ করে ছিন্ন,

     বিশ্ব মাঝে পেয়েছ নোবেল সম্মান। 

         বাংলা পঁচিশে বৈশাখ,জন্মদিবসে,

     কবিগুরুকে জানাই শতকোটি প্রণাম।


আজও তোমার উপেনরা সভ্য

   সমাজে সমান উপেক্ষিত, 

     অরণ্য ধবংস করে, 

         গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে, 

আদিবাসীদের নির্বাসনে পাঠিয়েছে

একদল অর্থপিশাচের দল।

   যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে,

      যারা ফসল ফলায়,

        দুমুঠো ভাতের জন্য যাদের

            মাঠে মাঠে জীবন কাটে, 

দেশের ধনকুবের শিল্পপতিরা

     এই সব উপেনদের সম্পত্তি

         নামে- বেনামে করে হস্তগত।


আজও সেই বিচারের বাণী

   নিরবে নিভৃতে কাঁদে, 

      মানবতার দরজায় দরজায়...

           চিৎকার করেও মানুষের দেখা নাই । 


উগ্রবাদী ধর্মীয় বিষবাষ্পের ছোবলে,

    বিপন্ন মানব সমাজ।

        পূজার বেদী রক্তে ভেজা, 

            টুঁটি চিঁপে হত্যা হয় এখন মানবতার।


কবিগুরু, আজ শিক্ষার বড়ই অভাব, 

   পৃথিবী ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত, 

গুটি কয়েক হাতে টিম টিম করে জ্বলে, 

     শিক্ষার আলো, জ্ঞানের মশাল।


বাঙালির চিন্তায়, চেতনায় কাব্য চর্চায়,

   সুরের ঝংকারে------

     আমি খুজেঁ পাই জীবন্ত রবীন্দ্রনাথ।

আমার হৃদয় বীণায় ধ্বনিত, 

     আজ শুধু একটাই নাম, 

        মানুষের কবি, বিশ্বের কবি

            আমার প্রানের কবি রবীন্দ্রনাথ।


09/05/2018

জামাল আনসারী


অতৃপ্ত ভগ্ন হৃদয়ে

 অতৃপ্ত ভগ্ন হৃদয়ে

by জামাল আনসারী

আশালতা,  তোমাকে ভালবেসে
  হৃদয়ে স্থান দিয়ে, আমি কী পেলাম ।
     বুকের অনল জ্বলে ধিক ধিক,
        স্বপ্ন গুলো আজ বেশ ধোঁয়াটে,
ধূপের মতো নীরবে নিঃশেষ হয়ে গেলাম।

কতবার ছুটে গেছি তোমার সুমিষ্ট ডাকে ।
  শিশিরের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়,
      কচি ঘাসে ঘাসে পা মেলি,
          স্বপ্নের পাখায় ভর করে
নির্জনে হাত টি রাখি তোমার হাতে।

বৃষ্টিবাদল দিনে সোঁদা মাটির গন্ধে
     হেঁটে চলেছি গোপন অভিসারে,
  প্রাণ খুলে তোমায় ভালোবাসি ।
মনে মনে ভাবি একান্ত আপন জন ।
   আশালতা,  আমাকে উপেক্ষা করো,
    আজ আমি বুঝতে পারি সব. ..
শুধুই ছলনা,  তুমি করো অভিনয় ।

আশালতা,  তোমাকে ভালবেসে
    হৃদয়ে জমা হলো হিমালয় সম অভিমান,
কিন্তু , আজ তুমি না ভালোবাসলেও
       আমার এই অতৃপ্ত ভগ্ন হৃদয়ে
লিখা থাকবে ছোট্ট করে তোমারই নাম ।

#জামাল আনসারী
08 / 03 / 2017

জামাল আনসারী


সময়ের সাথে সাথে

 সময়ের সাথে সাথে"

by জামাল আনসারী

তেরোটা বসন্ত কেটে গেল
দু জনের মাঝে এখন লোহিত সাগর।
তুমি আছ সেই রাজপ্রসাদে
    সোনার পালঙ্কে, এসি ঘরে।
       আমি আজও সেই অঁজ পাড়া
              গাঁয়ের ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে।
এই ছোট্ট ঘরেই তোমার কেটেছে
                   কত সোনালী বিকেল ।

এখন আর বিকেল হয় না,
     অমাবস্যার রাত্রিই থাকে।
         তোমার এখন কত দাস দাসী ?
নামী দামী কোম্পানির আসবাব পত্র,
    ঝাঁ চকচকে মার্বেল।
        ডাইনিং টেবিলে রুপোর চামচ।

তোমার কি মনে হয় না?
   সেই প্রতিশ্রুতির কথা?
        স্কুলের অফিস ঘর ।
যেখানে তুমি প্রথম হাত  রেখেছিলে হাতে।
    কম্পিত ঠোঁটের আলিঙ্গনে
           বলেছিলে, যদি পৃথিবীটাও  পাল্টে  যায় ,
                 তবুও হাতটি থাকবে তোমারই হাতে।
মনে পড়ে কি সেই পাথর  বাঁধানো নদী ঘাট?
          হাজারো পূর্ণিমার সেই একমাত্র নীরব সাক্ষী।

সময়ের সাথে সাথে কি সবাই পাল্টে যায়?
       পাল্টে গেছে সেই চড়ুই পাখিটি।
প্রতি বছরই স্কুলের অফিস ঘরে
        কাটিয়ে দিত যৌবন কাল।
সেই পাখি আজ  আর নেই,
        কোথায় চলে গেছে তাও জানি না ।
এসেছে নতুন অতিথি এক ঝাঁক কবুতর।
     তুমিও আজ পাল্টে গেছ তাই না?
            পেয়েছ রাজপুত্র,মনের মতো ঘর ।

সময়ের সাথে সাথে পাল্টায় নি শুধু আমি।
আমার হৃদয় জুড়ে তেরো বছরের স্মৃতিরা জেগে আছে।
       তুমি ভুলে গেলেও
             তারা কি আমাকে ভুলে যেতে পারে?
না,  কখনোই পারে না।
স্বপ্নের মধ্যেই আমাকে নিয়ে যাই ,
সেই পাথর বাঁধানো নদীর ঘাটে,
স্কুলের অফিস ঘরে।

স্মৃতি গুলিকে ধরে আছাড় মারতে চাই
কিন্তু কখনোই পারি না।
সময়ের সাথে সাথে সবাই পাল্টে যায়,
পাল্টায় নি শুধু আমি।

#জামাল আনসারী
25 / 04 / 2017


জামাল আনসারী



মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০

কন্যা সন্তান

 কন্যা সন্তান

By জামাল আনসারী

রত্নাদেবী ঘুম থেকে উঠে সকালবেলা কাঠের পিঁড়িতে বসে শীতের রোদ পোহাতে পোহাতে শালপাতার চুরুট টানিতেছিল। যেই মাত্র অন্তঃপুরের সূতিকাগৃহ হতে খবর পেল ছোট বৌমা আবার একটি কন্যা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে, সেই মাত্র হাতে ধরা জলন্ত চুরুট টি মাটিতে পড়ে গেল।পড়ে গেলেও চুরুট থেকে তখনও ধোঁয়া বেরুচ্ছে। সেই উড্ডিয়মান ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে, মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে বিরক্তির সুরে বলিল,  "আবার কন্যা সন্তান!"
ভাবখানা এমন যেন কন্যারা মানুষ নয়।
তারপর মনের সুখে ছোট বৌমার উদ্দেশ্যে গালি দিতে লাগিলেন, "পোড়ামুখী !এর পেটে শুধু মেয়েই আছে!ছেলে নাই ।আর একটা হলেই এক গন্ডা পূর্ণ হবেক।"
মুক্ত হরিণকে আড়াল থেকে কোনো ব্যাধ তীর নিক্ষেপ করে বিদ্ধ করিলে, হরিণের যেমন যন্ত্রণা হয় ,তেমনি শাশুড়ির কথাগুলি অন্তঃপুরে সদ্য কন্যা সন্তানের জননী সীতার বুকে এসে বিঁধল।

তবুও সীতা কোন প্রতিবাদ করিল না ।মুখ বুজে সব সহ্য করিল।গায়ে জড়ানো মলিন কাপড়ের একটি খুঁট ধরে দুই চোখের জল মুছে বলিল, "হে ঠাকুর!আমি কি ইচ্ছা করে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছি?  কন্যার জন্ম দেওয়া কি অপরাধ? তুমি ন্যায্য বিচার করো ঠাকুর।"

যে সদ্যজাত  কন্যা সন্তান কে কেন্দ্র করে রত্নাদেবীর সদা হাস্য রত মুখটা এখন পাংশু, বিবর্ন। সেই ফুটফুটে কন্যাটি মায়ের বুকে নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে ভাবছে, এই পৃথিবীটা মনে হয় তার মায়ের মুখের হাসির মতোই সুন্দর ও পবিত্র।



মা কালীর দিব্যি বলছি

 মা কালীর দিব্যি বলছি

By জামাল আনসারী

"বাবা,ও বাবা, ওঠো।" মদন কাকা ডাকতে এসেছে।
ছেলের ডাকে রবিবাবু ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে চোখ কচলাতে কচলাতে কৌতূহলে জিজ্ঞাসা করলেন, "কোন মদন রে?"এতো সকালেই ডাকছে!
... "সেই মদন কাকা গো! যে আমার চাকুরিটা করে দেবে বলেছিল।" তাড়াতাড়ি ছেলেটি বলে ফেলে।

...ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে রবিবাবু ফিক করে হেসে অন্যমনস্ক ভাবে বলল, "ও বুঝেছি। মদন চৌধুরী। আমাদের পঞ্চয়েত এর প্রধান। গত ইলেকশনে ভোটের সময় বলেছিল,ছেলের চাকুরী করে দেব। ভোটে জিতে আর কোনোদিন দেখা করেনি। আজ  সাত সকালেই এসেছে। তাহলে নিশ্চয় ভালো খবর আছে।  যাক এতদিনে ঈশ্বর মুখ তুলে চাইল।"

দেরি না করে ছেলেকে বলে পাঠালো ,"তোর মদন কাকাকে কাঠের পিঁড়িটাই বসতে দে। আমি এখুনি যাচ্ছি।"

রবি বাবু বিছানা ছেড়ে লুঙ্গিটা ভালো করে পরে, ঘর থেকে গলা খাঁকারী দিয়ে বেরুতেই মদন চৌধুরী কাঠের পিঁড়ি থেকে উঠে হাতজোড় করে বললেন, "নমস্কার! নমস্কার রবি দা। ভালো আছেন তো!

রবিবাবুও প্রতি নমস্কার জানিয়ে বলে, "তোমাদের দয়ায় ভালোই আছি।তবে ছেলের চাকুরী করে দেবে বলেছিলে, চাকরির ব্যবস্থা কি হয়েছে?"

..."না। না। রবি দা। এই বারে ভোটে জিতালেই তোমার ছেলেকে আগে চাকরি দেব।  মা কালীর দিব্যি বলছি.....


জামাল আনসারী
 


বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০

সমাজিক নাটক বাল্যবিবাহ

সামাজিক নাটক বাল্য বিবাহ।

রচনায় : জামাল আনসারী


নাটকটি অভিনয় করেছেন মুর্শিদাবাদের Fatullapur sashimoni High school এর ছাত্র ছাত্রী বৃন্দ।
যে সমস্ত ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নাটকটি অভিনীত হল, .... সেই সমস্ত কলা কুশলীদের আমার অন্তরের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।



বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তর ,স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের কন্যাশ্রী ভাতা দেওয়ার ফলে সমাজে  বাল্য বিবাহ  অনেকটা কমে এসেছে। তবুও সমাজে কোথাও প্রকাশ্যে,

আবার কোথাও লুকিয়ে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

এই নাটকে মূলত আমি তিনটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি..

👉প্রথমতঃ সমাজে ছেলেমেয়ে যে দুই সমান তার একটা বার্তা দেওয়া ।


👉দ্বিতীয়তঃ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে  সচেতন করা ।


 👉তৃতীয়তঃ মেয়েদের লড়াক্কু  মনোভাব তৈরি করা ।


 আপনারা নিশ্চয় জানেন যে,বাল্য বিবাহ আইনত দণ্ডনীয়  অপরাধ। মেয়ের বয়স 18 বছর না হলে আপনারা কেউ মেয়ের বিয়ে দেবেন  না।বাল্যবিবাহ  শুধু একটি মেয়ের উপর নয়, এটি সমাজ তথা দেশের উপর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে ।তাই এ ব্যাপারে  আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। জনমত গড়ে তুলতে হবে। 




নাটক: বাল্যবিবাহ
এই নাটকের ভিডিওটি দেখতে চাইলে youtube এর নীচের লিঙ্কটি খুলুন...
👇👇👇

নাটক: বাল্য বিবাহ

নাটক : বাল্যবিবাহ


গত 04/02/2020 আমার পূর্ণপানি জুনিয়র হাই স্কুলে সফলভাবে মঞ্চস্থ  হয়ে গেল আমার লেখা প্রথম নাটক... "বাল্যবিবাহ"। যে সকল ছাত্র ছাত্রী অভিনয়ের মাধ্যমে নাটকটিকে বাস্তব রূপ দিল, তাদেরকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন জানাই। তাদের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।


বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তর ,স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের কন্যাশ্রী ভাতা দেওয়ার ফলে সমাজে  বাল্য বিবাহ  অনেকটা কমে এসেছে। তবুও সমাজে কোথাও প্রকাশ্যে,

আবার কোথাও লুকিয়ে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

এই নাটকে মূলত আমি তিনটি বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি..

👉প্রথমতঃ সমাজে ছেলেমেয়ে যে দুই সমান তার একটা বার্তা দেওয়া ।


👉দ্বিতীয়তঃ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে  সচেতন করা ।


 👉তৃতীয়তঃ মেয়েদের লড়াক্কু  মনোভাব তৈরি করা ।


 আপনারা নিশ্চয় জানেন যে,বাল্য বিবাহ আইনত দণ্ডনীয়  অপরাধ। মেয়ের বয়স 18 বছর না হলে আপনারা কেউ মেয়ের বিয়ে দেবেন  না।বাল্যবিবাহ  শুধু একটি মেয়ের উপর নয়, এটি সমাজ তথা দেশের উপর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে ।তাই এ ব্যাপারে  আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। জনমত গড়ে তুলতে হবে। 




নাটক: বাল্যবিবাহ

এই নাটকের ভিডিওটি দেখতে চাইলে youtube এর নীচের লিঙ্কটি খুলুন...
👇👇👇

আগুনের পরশমণি গান ও রোদ্দুর রায়

 আগুনের পরশমণি গান ও রোদ্দুর রায় সম্পর্কে একটি ছোট্ট আলোচনা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত গান " আগুনের পরশমণি।"  যে গানের সুর আপামর বাঙালীর হৃদয়ে নব প্রানের সঞ্চার করে, হৃদয়কে  আন্দোলিত করে। 

সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা "আগুনের পরশমণি" গানটি আজ আবার youtube এ শুনলাম।

 সত্যি বলছি গানটি শুনে কি জানি আজকে ভয়ে চমকে উঠেছি।

 বর্তমানে কিছু রবীন্দ্র সংগীতকার  রবীন্দ্র সংগীত চর্চা কে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে ,আপনি একবার রোদ্দুর রায়ের কন্ঠে গাওয়া "আগুনের পরশমণি"গানটি শুনলে আপনার শরীরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত লোম খাঁড়া হয়ে যাবে। আমাদের দেশ স্বাধীন।এখানে স্বাধীন ভাবে সংগীত চর্চা করার অধিকার সবারই আছে। তাই বলে সঙ্গীতকে বিকৃত করে, অশ্লীল মুখভঙ্গি করে গান গাওয়ার বা সেই গানকে youtube এর মত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্রকাশ করার অধিকার কারো থাকা উচিত বলে আমি অন্তত মনে করি নাই। রোদ্দুর রায়, কতবড় রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ?? তা আমি জানি নাই। তবুও বলছি, রোদ্দুর রায় যত বড়ই সঙ্গীত শিল্পী হোক বা যত বড়ই মহান মানুষ হোক  এই ভাবে বেসুরে  রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে তিনি সমগ্র সংগীত প্রেমীকে অপমানিত করেছেন।  তিনি সেই বেসুরে গাওয়া " আগুনের পরশমণি" গানটি youtube পোস্ট করে নিজের শিল্পী স্বত্তাকে কতটা মহিমান্বিত করেছেন, তা আমার জানা নেই! সমস্ত সঙ্গীত শিল্পীকেই বলছি, যদি ভালো গান না গাইতে পারেন, ছেড়ে দিন, অন্য কেউ গাইবে। আপনাকে গাইতেই হবে ,এমন কোনো কথা নেই।পারলে ভালো গান করুন, এমন বেসুরে গান গেয়ে সংগীতকে অপমান করবেন না। 

যদি সময় থাকে ,তাহলে একবার "আগুনের পরশমণি" গানটি শুনে দেখতে পারেন। আমি নীচে রোদ্দুর রায়ের কন্ঠে গাওয়া গানের লিঙ্কটি দিলাম। 

দেখুন....


https://youtu.be/0klvL_aVu98


বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০২০

যে কথা হয়নি বলা

আমার জীবনের প্রথম কবিতা সংকলনের নাম 


 " যে কথা হয়নি বলা। "

 এটি বেদুঈন পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
এই কবিতা সংকলন টি কেউ ডাউনলোড করতে চাইলে নীচের লিঙ্কটি ক্লিক করে খুব সহজেই করতে পারবেন। 
👇👇👇👇


যেকথা হয়নি বলা



ক্ষুধার্ত


বন্দুকের নলেই জন্মে সন্ত্রাস,
সন্ত্রাসের ধংস বন্দুকের বাট।

রক্তেই লুকিয়ে আছে জীবন ,
কঙ্কালে জমা থাকে রক্তের দাগ।

তুমি ক্ষুধার্ত, বুলেট দাও পেটে,
ক্ষমা নেই,প্রাপ্য  অধিকারে,

পশুরাজ শিখেছে ঘাস খেতে,
বুকের অনল জ্বলছে নীরবে।

★★★★★★★★★★★★

Jamal ansary




শৈশবের স্মৃতি

শৈশবের স্মৃতি

By জামাল আনসারী

ফেলে আসা দিন গুলো,হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো,
শৈশবে ডুব দিলে স্বচ্ছ দেখা যায় ।
এক পায়ে দাঁড়িয়ে তালগাছ,
বিস্তীর্ণ উঠানে খড়ি মাটির সেই ঘর।
হোক না কেন, সেই ঘর অস্থায়ী ?
ছু -কিত কিতে কোথায় হারিয়ে ফেলতাম,
কে আমার আপন? কে আমার পর?
ছিল না তখন এত হিংসা,  এত ঘৃণা ভাব।
ছিল শুধু টাকারই অভাব।

পাশের বাড়ির আমগাছে কচি কচি আম।
সবেমাত্র এই ধরছে কুঁড়ি,
দেখার পর ঘুম নেই দিনে রাতে,
একটু সুযোগ পেলেই. ...
আম পাড়তে হাজার ঢিল ছুঁড়ি।
বাবা মা'র বকুনি,  সে তো জলভাত!
ফেলে আসা দিন গুলো, হারিয়ে যাওয়া সেই দিন,
শৈশবে ডুব দিলে এখনও অমলিন।

প্রথম যখন স্কুলে ভর্তি  হয়,
কি ভয় ছিল মনে?
অ-অজগরের থেকেও বেশি ভয়,
মাস্টার মশাই দের কড়া শাসনে।
সহপাঠীদের চুপি চুপি চিমটি কাটা,
পেনসিল চুরি,আর কে নাই করে?
প্রায়ই কান্নাকাটি করে ফিরতাম ঘরে ।
সেই শৈশব আজ আর নেই,
শিশিরের শব্দের মতো নীরবে নিয়েছে বিদায়।

ফেলে আসা দিন গুলো, হারিয়ে যাওয়া সেই দিন গুলো,
সত্যিই কি মধুর !
লজেন্স নিয়ে বায়না ধরেছি,
ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে কি কম ?
ছিপ ধরে কত বিকেল কেটেছে,
সূর্য ডুবে গেছে বাঁশঝাড়ে,
আঁধারে যখন বাড়ি ফিরেছি , ভয়ে গা ছমছম।
গোলাপের কুঁড়ি শুকিয়ে গেলেও
মৌমাছির মতো সঞ্চয় করে রাখেছি,
কিছু সোনালী স্মৃতি।
ফেলে আসা দিন গুলো, হারিয়ে যাওয়া সেই দিন,
শৈশবে ডুব দিলে বন্ধু,
পরিষ্কার দেখা যায়,হারিয়ে যাওয়া সেইসব সোনালী স্মৃতি।

★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★

জামাল আনসারী



হে অগ্রদূত

হে অগ্রদূত

হে অগ্রদূত, আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত
দিকভ্রান্ত এক সৈনিক।
চেয়ে দেখ-- ধ্বংসের পথে ক্ষুধিত পৃথিবী,
অন্ধকারাচ্ছন্নে নিমজ্জমান।
চারদিকে পিপাসিত দৃষ্টি,
রক্তলোলুপ দানবের অত্যাচারে,
ক্ষয়িষ্ণু, সংকীর্ণ তব চলার পথ।
হে অগ্রদূত, উদ্দাম বেগে এগিয়ে যাও---
আলোর মশাল হাতে।
জ্ঞানের আলো,শিক্ষার আলোর স্পর্শে
মুছে যাক---দারিদ্র্যতা,অপুষ্টি।
ধ্বংস হোক,ক্ষুধিত পৃথিবী।
জেগে উঠুক সুপ্তোত্থিত  আগ্নেয়গিরির মতো
মানব সভ্যতা।
পৃথিবীজুড়ে ধ্বনিত হোক মানবতার গান।
হে অগ্রদূত, এগিয়ে যাও,এগিয়ে যাও......

...............সমাপ্ত..............

জামাল আনসারী


চোখের দেখা

চোখের দেখা

By জামাল আনসারী

একটি মেয়ে পড়ছে মনে,শুধু চোখের সামনে,
কেমন সে মেয়ে?
কি তার বর্ন?
কল্পনাতেই ফুটে ওঠে কাঁচা মনের আনন্দ।
তুমি কি পাগল?
ভালবাসার সুর তুলছ গোপনে?
কোথায় তার বাড়ি?
কি তার নাম?
কেন  তোলপাড় হয় আমার মনে মনে---
একটি মেয়েই পড়ছে মনে, শুধু চোখের সামনে।

যা চাই তা পায় না,
যা চাই না তাই পায়.......
এটাই কি বিধাতার লিখন?
যতই তোমায় দেখি আমি....
মন ভরে না দেখে,আরও দেখতে চাই।
হৃদয় বৃন্তে যে ফুল ফোটে,
তার কি গন্ধ বর্ন আছে?
প্রান ভোমরা  ঘুরে তবু গাছে গাছে।
কেন কিসের নেশার..?
একটি মেয়ে পড়ছে মনে,শুধু চোখের দেখায়।

আশার কানন থেকে যখন ফিরিয়েছ মন,
তবে কেন বৃথা আশা করো.....?
থাক না যতোই ভরা নদীর যৌবন।
আরে সেই মেয়ে তো অপরের গচ্ছিত ধন,
মিছে কেন আশা করো?
সেই মেয়ে কি কোনদিন আসবে জীবনে?
তবুও একটি মেয়ে পড়েছে মনে, চোখের সামনে।

★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★

জামাল আনসারী




ফুলের রাজনীতি

ফুলের রাজনীতি

By জামাল আনসারী

বঙ্গের ডাঙায় ফুটেছে দুটি ফুল, পদ্ম আর ঘাস।
এই ফুলের সুগন্ধে আমজনতার উঠছে নাভিশ্বাস।।

কোন ফুল ছোট আবার কোনটা একটু বড়োসড়ো।
ফুলের রাজনীতিতে রাজ্যবাসী ভয়েই জড়োসড়ো।।

ছোট ফুলের নাম শুনলেই বড়ো ফুলের গাত্রজ্বালা হয়।
চোখ বন্ধ করলেও দেখছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে উন্নয়ন।।

বড়ো ফুলটাও নাকি ভাল নয়, গায়ে সাম্প্রদায়িক গন্ধ!
বাম-রাম- অতিবাম, ফুলের রাজনীতিতে লাগিয়েছে দ্বন্দ্ব।।

রাজ্যের কোথাও চলছে গোলাগুলি,কোথাও পড়ছে লাশ।
দুই ফুল মিলেমিশেই  রাজ্যবাসীকে দিচ্ছে আচুলা বাঁশ।।
                     ..........সমাপ্ত........

জামাল আনসারী






ভ্যালেন্টাইন ডে

ভ্যালেন্টাইন ডে

By জামাল আনসারী

আজ ভ্যালেন্টাইন ডে। সঞ্জয়ের কথা মতো,চৌরাস্তার ধারে সোমা একগুচ্ছ তাজা গোলাপ হাতে ধরে বুকভরা আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার দুচোখে সোনালী দিনের স্বপ্ন ।অনেকদিন পর আজই প্রথম ভালোবাসার মানুষটির নতুন বাইকে চেপে সিনেমা দেখতে যাবে। 


একা একা দাঁড়িয়ে ঘন্টা খানেক  চাতক পাখির মতো  অপেক্ষা করার পর অবশেষে সঞ্জয়ের দেখা পেল।
কিন্তু অপেক্ষার অবসান হলেও সোমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে সিনেমা দেখার স্বাদ অপূর্ণই রইল। সোমার চোখের সামনেই কলেজ বান্ধবী রিতাকে বাইকে চাপিয়ে সঞ্জয় সিনেমা দেখতে গেল।

★★★★★★★★★সমাপ্ত★★★★★★★★

জামাল আনসারী



জীবনের মূল্য

জীবনের মূল্য

By জামাল আনসারী

জীবনের মূল্য কি আছে ভাই?
কেনো করো হিংসা, বিদ্বেষ?
তুমি, আমি কেউই নয় অমর,
জীবনের রঙ্গমঞ্চে শুধুই অভিনয়।জীবনের মূল্য

আমার বাড়ি!আমার গাড়ি!
ক্ষণস্থায়ী,মহাকালের গর্ভে,
ব্যবহারেই তোমার পরিচয়,
ভালবাসা ছাড়া কি আছে মর্তে?

বৃথাই তুমি ব্যথা দাও মনে,
কি সুখ পাও অপরকে কাঁদিয়ে?
বোঝ না কেনো অবুঝ মনের কথা?
যদি পারো তো যাও হাসিয়ে।

জীবনের মূল্য কি আছে ভাই?
কেন করো মানুষকে অবহেলা!
আমিও থাকবো না তুমিও না,
এ জীবন যেন দু দিনের খেলা

★★★★★★★★★★★★★

জামাল আনসারী




বিয়ের ছাপানো হলুদ কার্ড

বিয়ের ছাপানো হলুদ কার্ড

By জামাল আনসারী

যে কথাটি বলতে গিয়েও বলতে
      পারি না, আগে কোনদিন,
সেই কথাটি হঠাৎ আজ মনে
       পড়েছে বারে বারে সারাদিন।

কতবার সাহস করে গেছি
      তোমার একেবারে কাছাকাছি,
পাশাপাশি বসে,হাতে হাত রেখে
      তবুও বলতে পারিনা,তোমায় ভালবাসি।

আনন্দ,স্ফুর্তি,হাসি মজা করে
    কেটেছে আমাদের স্কুল জীবন,
তোমাকে নিয়েই ঘর বাঁধার স্বপ্ন
         দেখেছে আমার অবুঝ মন।

বর্ষা বাদল দিনে,আমরা দুজনে
    পলাশের বনে,খেলেছি লুকোচুরি খেলা,
সেই স্মৃতি আজ উথলে আমার
         সানাই এর সুরে বিদায় বেলায়।

ভালো থাকো,সুখে থাকো প্রিয়া
    নাই বা হলাম তোমার বডি গার্ড
হাতে পেলাম আমার ভালোবাসা,
         তোমার বিয়ের ছাপানো হলুদ কার্ড।

যে কথাটি বলা হয়নি আজও
     সে কথাটি হৃদয়েই সুপ্ত থাক,
দূর থেকে তোমায় করি আশীর্বাদ
       না বলা কথাটা না বলায় থাক।
......................সমাপ্ত........




জ্যোতিষী

জ্যোতিষ  ব্যবসা

জ্যোতিষ ব্যবসা লোক ঠোকানো  ব্যবসা,
        অবশেষে ধরা পড়ে গেল।
মোদি সরকারের নোট পরিবর্তন
         জ্যোতিষীদের অজ্ঞতসারেই হল।

নোটের অকালে ফাঁকা চেম্বারে বসে,
    জ্যোতিষী  দেখে নিজের হস্তরেখা,
সকাল থেকে বিকাল কাটে,
        তবুও মিলেনি খদ্দেরের দেখা।

অতীত-বর্তমান,ভবিষ্যৎ বক্তা
      'জ্যোতিষ সম্রাট ' নামধারী
উরি তে হল জঙ্গি  হামলা,
       আগাম জানার কে অধিকারী?

জ্যোতিষীরা যদি সবই জানে,
      বলে না কেন আগে,
লোক ঠকানো  ভণ্ডামি  তাদের,
      ভাবতেই অবাক লাগে।

ভাই, নিজের ভাগ্য নিজে গড়ো,
    থাকে না কারো হাতে লেখা,
পাথর পরলে ভাগ্য ফিরে,
    জ্যোতিষী দের মিথ্যে কথা।

★★★★★★★★★★★★★★★

১৮/১১/২০১৬
(কবিতাটি মোদি সরকারের নোট বাতিলের সময় লেখা)



শীতের দিনে

শীতের দিনে

By জামাল আনসারী

শিতের দিনে শিশিরবিন্দু জমে,
কংক্রিটের রাজপথের দুই ধারে,
নি:স্তব্দ রাত্রির অন্ধকারে,
অনাবৃত হৃদয়ের জানালায়।
তাই উত্তাপের প্রয়োজনে---
গরম কাপড়ের চারদিকেই ছড়াছড়ি।
টাকার উপরে কি শীত পড়ে?
এক টুকরো রৌদ্রের অপেক্ষায়
বিনিদ্র রজনী কাটায়
লক্ষ,লক্ষ ফুটপাথ বাসী।
স্যাঁতস্যাঁতে ঝুপড়ি ঘরে বন্দি থাকতে থাকতে
জীবনের রঙিন স্বপ্ন গুলো ---
কেমন যেন হিম শীতল হয়ে যায়।

শীতের দিনে চাতক পাখির মতো
রৌদ্রের তৃষ্ণাতুর,
প্রতিটি রাত্রি কাটে।
দেশে শীতবস্ত্রের কৃত্রিম অভাবে
স্যাঁতসেঁতে ঘরে ঠাণ্ডাভাব বাড়তেই থাকে,
গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
হে মুক্তিদাতা সূর্য---তুমি উদিত  হও
আমাদের স্যাঁতস্যাঁতে ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★

জামাল আনসারী




হৃদয়ে যে আগুন জ্বলছে

হৃদয়ে যে আগুন জ্বলছে

By জামাল আনসারী 

দূরে দূরে এককি দাঁড়িয়ে ,
তুমি এমন করে কি দেখছ ?
বৃষ্টির আঘাতে গাছের পাতা নড়ে,
কচি কচি পাতা আলাপ জমায়।
তবুও তোমার চোখের পাতা এক হয় না কেন?
তুমি কি চাও?
এ যুগে না চাইলে কিছুই পাওয়া না,
তাই না?
শিশুরা না কাঁদলে
কি মায়ের দুধ পাই ?

আমার ক্ষুধার্ত হৃদয়ে পাত  কান
শুনতে পাবে,  হাজার বছরের অতৃপ্তীর গান।
হৃদয়াকাশ জুড়ে ঘন মেঘের ঘনঘটা,
এখনি বৃষ্টি হবে শুরু ,
তুমি কি শুনতে পাও না ?
মেঘের গর্জন,করে গুরু গুরু,
তুমি অমন করে আর দূরে থাক না ?
কাছে এসো,পাশে এসো,
একটু বৃষ্টিতে খেলা করি,
বৃষ্টির জলে ভিজে, বৃষ্টির স্বাদ গ্রহণ করি ।

তবুও কোন সাড়া পাওয়া যায় না ।
চুপ চাপ, চারিদিকে নিস্তব্ধ,
এক পশলা বৃষ্টিতে সব কিছু ভিজিয়ে দিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পরে  শুনে পাই সুমিষ্ট ডাক...
তুমি কি মিষ্টি জল  করেছ পান?
যে মিষ্টি জল সুপিরিয়র হ্রদের জলকে করে ম্লান ।
যদি অভুক্ত থাকো,
তাহলে চলে এসো নির্ভয়ে.....
আমরা সুপিরিয়র হ্রদের জলে  নির্ভয়ে খেলা করি,
আমাদের অতৃপ্ত হৃদয়ে যে আগুন জ্বলছে,
বৃষ্টির জলে, মিষ্টি জলে ভিজে,
ক্ষুধার্ত হৃদয়ের আগুনকে নিভিয়ে ঠান্ডা করি।

..........সমাপ্ত.........

জামাল আনসারী




সম্পর্ক

আচ্ছা,সুতপা আমাদের সম্পর্ক টা
        আবার নতুন করে গড়লে হয় না?
সংসারে চলার পথে কত কিছুই ভাঙে আবার গড়ে,
     তবুও জীবন তরী এগিয়ে চলে।
          বিগত দিনের কিছু স্মৃতি,
হৃদয়ে জমানো রাগ, দুঃখ,  ক্ষোভ, অভিমান,
     পিছনে ফিরে কি লাভ ?
সকালে সূর্য ওঠে, আবার বিকালে অস্ত যায় ।
        নদীর একূল ভাঙে ওকূল গড়ে,
            থেমে থাকে না ব্যস্ততম  সময়।
আচ্ছা,সুতপা আমাদের সম্পর্ক টা
       আবার নদীর মতো গড়লে হয় না?

বাড়ির শিমুল গাছের সেই বুড়ো কোকিল টি,
      আজও তোমার সুরে সুরে ডাকে,
            কি মিষ্টি সেই ডাক?
তোমার ভালোবাসার সেই বেড়াল ছানাটা,
        জানো কত বড় হয়েছে?
              তোমার কি তার কথা মনে পড়ে না?
আচ্ছা,  সুতপা আমাদের সম্পর্ক টা
         আবার নতুন করে গড়লে হয় না?

বকুল তলায় বসে বসে কাটিয়েছি ,
       হাজারো রামধনু বিকেল...
            গ্রাম থেকে ভেসে আসা
                  মেঠো বাউলের একতারার সুর,
পাগল করে তুলত দুই কচি হৃদয়।
এখনোও বিকেলে বকুল তলায় যাই,
     কিন্তু শোনা যায় না, আর সেই সুর ।
          তোমার বিরহে মাঠ,ঘাট আজ নীরব
আচ্ছা, সুতপা আমাদের হৃদয়ে সেই
       মেঠো বাউলের সুরকে জাগিয়ে তুললে হয় না?
          হারানো দিনের মধুর সম্পর্ক টা------
                আবার নতুন করে গড়লে হয় না?



তুমি আসবে বলে

তুমি আসবে বলে খুলে রেখেছিলাম
আমার মনের দরজা জানালা।
চেয়েছিলাম মহানন্দে আপ্লুত
চাতকের মতো ঐ নীল আকাশের পানে।
তুমি এলে না-----
তবুও খুলে রাখলাম মনের দরজা জানালা ,
শুধু তুমি আসবে বলে।

তুমি আসবে বলে সাজিয়ে ছিলাম
আমার সুপ্তোত্থিত হৃদয় কানন,
তুলে রেখেছিলাম আমার প্রিয় ফুলগুলি
তুমি এলে না------
শুকিয়ে গেল সেই প্রিয় ফুলগুলি
'শুধু তোমারই অপেক্ষায়।'

তুমি আসবে বলে ভরে উঠেছিল
আমার মজা নদীর দুই তীর।
নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছিল
শস্য, শ্যামল,  উর্বরা সমভূমি,
তবুও তুমি আর এলে না----
সুপ্ত রইল ভরা নদীর উন্মুক্ততা জলরাশি।
জানি, তুমি আসবে না---
তাবুও খোলা রাখব,
শুধু তোমারি জন্য----
আমার মনের দরজা জানালা খানি।

..................সমাপ্ত ।



শনিবার, ১ আগস্ট, ২০২০

মানবতা



মানুষ নাই রে ভাই,মানবিকতা নাই,
আছে শুধু স্বার্থের চোখে ঠুলি।
আর আছে বুলেট বিদ্ধ কঙ্কালের বুকফাটা আর্তনাদ।
কলেজার টুকরো যে আমার আপন ভাই,
কথায় বলে, "পিঠের ভাই,গাঁঠের সোনা"
তারই তাজা রক্তে আজ খেলছি হোলি।
কিছুই আজ আর অবশিষ্টাংশ নাই,
অজ্ঞাতসারেই মানবতার কফিনে 
শেষ পেরেক টুকু নির্দয়ে মারি,
আমরা তাই আজ সভ্যতার পিছনের দিকে চলি।

টাকার উপরে রাজপ্রসাদ বানায়,
বাস্কবন্দি টাকা নিয়েই আকাশে দিই পাড়ি
ক্ষুধিত মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে,
নায্য আধিকারে বঞ্চিত করেই,
সর্বহারাদের বুকে সজোরে মারি লাথি
আমরা এখন ফুটপাতের ভিখারি গড়ি।

মনুষ্যত্ব আজ পশুত্বের কাছেই পরাজিত
লজ্জায় রাখে নিজের মুখ ঢাকি,
মৌলবাদী দের হুঙ্কারে পৃথিবী কম্পমান।
অস্ত্রের প্রতিযোগিতায়,মানবতা ভীত সন্ত্রস্ত,
 সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তীব্র আস্ফালনে,
পৃথিবীর ঘোর সংকটপূর্ণ অবস্থা এখন।
 কি করে বাঁচি! শ্যাম রাখি না কূল রাখি,
আমরা তাই সভ্যতার পিছনের দিকে হাঁটি।

মানবতা আজ ধর্ষিত দিকে দিকে,
রক্তলোলুপ শক্তি ধরেছে গলা টিঁপে
আপনচক্ষু মেলে একটু দেখুন দেখি,,
শুধুমাত্র সংসারের অভাবের জ্বালায়,
লিখাপড়া শিঁকোয় তুলে দিয়েই,
দুটো কাচা টাকা রোজগারে আশায়,
কত মেধাবী ছাত্রছাত্রী কলকারখানায়,
চায়ের দোকানে,বেকারী শিল্পে,
বড়োলোকের বাড়িতে বেগার খাটে।
কত তরতাজা জীবন অভাবে অঙ্কুরেই যায় ঝরে?
মানবতার চোখের সামনে মানবতার অপমৃত্যু ঘটে।
কেউ কি কোনদিন তার হিসেব লিখে রাখে?
তবুও আকাশে সেই লাল সূর্যটা স্বমহিমায় ওঠে।

অবাধ লুন্ঠনের রাজত্বে সংখ্যাগুরুই আজ ডাকাত।
মানুষের লোভের কোনো সীমাপরিসীমা নাই।
সকালে পাখির সুমিষ্ট ডাকে ঘুম ভেঙে দেখি,
চৌরাস্তার মোড়ে পড়ে আছে বেওয়ারিশ লাশ।
হয়তো সে সত্যের মূর্ত প্রতীক,
জীবন্ত মানবতা,অকুতোভয় বীর সৈনিক।
লোকে লোকারণ্য, চারপাশ ঘিরে চিৎকার চেঁচামেচি...
মাঝখানে রাস্তায় উপর শুয়ে আছে নিথর রক্তাক্ত দেহ।
সাহায্য, সহযোগিতার কোন বালাই নাই,
শুধু জিরাফের মতো ঘাড় উঁচু করে আমরা সবাই দেখি,
সমাজে আমরা আজ বোবা,কালা,হয়ে বেঁচে আছি।

বাবা মায়ের নি:স্বার্থ ভালোবাসায় ছোঁয়ায়,
লেখাপড়া শিখে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত একমাত্র ছেলে,
তবুও একমুঠো ভাত থেকে বঞ্চিত মা-বাবা
আজও বৃদ্ধাশ্রম অঝোরে কাঁদে সেই জন্মদাতা।
লাঠি ধরে জীর্ণদেহে বৃদ্ধ দম্পতি এক পা,দু পা হাঁটে,
ছেঁড়া কাপড়ে কত অপূর্ন স্বপ্ন চোখের জলে মুছে।
মানুষ নাই রে ভাই,মানবিকতা নাই
মানবিকতা হয়তো বন্দি হয়ে আছে,
কোটিপতিদের তালা দেওয়া বদ্ধ ঘরে।

দুর্নীতির কালো পাহাড়ে মানবিকতাপ্রতিনিয়ত চাপা পড়ে।
বাঁধা থাকে অফিসের লাল ফিতের ফাঁসে,
মানবতা,আজ অসহায়,নিরুপায়
নির্জনে বুক চেপে ডুঁকরে ডুঁকরে কাঁদে,
বন্ধুকের নলের সামনে নতজানু তরতাজা যুবক,
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে বলির পাঁঠা।
মুছে যায় হাজার হাজার সিঁথির সিঁদুর,
অনাথ,অগুনতি দুধের শিশুর শৈশব।
মানবিকতা পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে,
কাঁটাতারের দুর্ভেদ্য বেড়াজালে,
আজও মৃত লাশের বুকের ওপর
নির্মম শোষনের বুলডোজার চলে।

একটা কথা শুনে রাখো ভাই,,
মানুষের একটাই ধর্ম হওয়া উচিত, মানবতা
হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কখনও নয়, 
আমার ধর্ম সেই মহান মানবতা, 
সত্য কথা বলতে আমি আজও কুণ্ঠিত নয় ।

বিভেদের প্রাচীর তুলে ধর্মের ষাঁড়েরা করে হানাহানি, 
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে তাই শুধু মারামারি হয় ।
মানতে চাই না তারা কোন যুক্তি তর্কের কথা,
ধর্মই বিভীষিকাময়,সজোরে মানবতার উপর মারে লাঠি,
ভয়ে ভয়ে আমরা তাই সভ্যতার পিছেনের দিকে হাঁটি।

জাগ্রত বিবেক


নিশার অন্ধকারে মরু- সাগর গিরি, 
   দুর্গম পথ অতিক্রম করে----
হেঁটে চলেছি আমি ইতিহাসের পথে ।
লৌহ বাঁধানো রথে পাড়ি দিয়েছি দেশ থেকে দেশান্তরে,
       পৌঁছে গেছি উন্নত মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে।

চক্ষু মেলে দেখি, 
উর্বর নদীর তীরে গড়ে উঠেছে 
 বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী, মানব জাতির সভ্যতা।
মহেজ্ঞদারো-,হরপ্পা-মিশরীয়, 
সুমেরীয়, প্রাচীন চীনের সভ্যতা।
   পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলাম সব মানুষই এক!
          আমি এক জাগ্রত বিবেক।

এই তো সেদিন,বিম্বিসার,অশোক,হর্ষবর্ধনের রাজ্য,
দিল্লির সুলতানী যুগ,শক্তিশালী মুঘল সাম্রাজ্য ঘুরে এলাম।
 কিন্তু মানুষ কোথায়??মানুষ আর মানুষে নেই, 
     আদিম যুগের পশুস্তরে নেমে গেছে।
মানুষ আজ প্রচণ্ড দাম্ভিক, স্বার্থপর, বিশ্বাস ঘাতক।
     একতা ভুলে ধর্মের উদ্দামতার মাতোয়ারা।
         ইতিহাসের পাতায় ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলাম, 
কি আশ্চর্য? কোথাও লেখা নেই
    সেই সব ভারী ভারী নাম।
কিন্তু এই মহা শক্তিশালী নাম গুলোই নিয়ন্ত্রণ করে দেশ,
    পৃথিবীকে উলটে পালটে দেওয়ার আস্ফালন করে !

হিউয়েন সাঙ, ফাহিয়েন,মেগাস্থিনিসের লেখা
    তন্ন তন্ন করে খুঁজে এলাম ।
এলাহাবাদ শিলালিপি,হাতিগুমফা শিলালিপি,
 আরো কত হাজার লিপি, গুহা চিত্র।
     কোথাও লেখা নাই রে ভাই,
           বর্তমানের মহা শক্তিধরদের নাম ।

ধর্মের চোখ রাঙানিকে অতিক্রম করে, 
    পৌঁছে গেছি, প্রাগৈতিহাসিক যুগে, 
কিন্তু হায়! কোনো ধর্ম গুরুই তো নেই, 
    ----এই তল্লাটের স্থায়ী বাসিন্দা।
        আছে শুধুই বিশালাকৃতি ডাইনোসর।
            জানিয়ে গেলাম বন্ধু আসল কথা,     
   মানুষের ধর্ম মানবতা, আর সব মানুষই এক।
কখনই করো না ভাই, মানুষে মানুষে বিভেদ,
          আমি এক জাগ্রত বিবেক ।

আমার দেশ



মহান ভারতবর্ষ আমার দেশ।
এটাই আমার মাতৃভূমি, জন্মভূমির দেশ।
তাই প্রাণপ্রিয় আমার দেশকে ভালোবাসি----
ভালোবাসি আমার দেশের প্রতিটি মানুষ।
আমার হৃদয়ের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে, 
আমার দেশের নিঃস্বার্থ সেবা করে যাব, 
এই হোক দৃঢ় অঙ্গীকার, যতক্ষন থাকবে চেতনা,হুশ।

জানিয়ে রাখি,আমি অন্তর্যামী নয়, 
নয় কোন ভণ্ড জ্যোতিষী।
তবুও আমি বুঝতে পারি, আমার মন প্রাণ দিয়ে,
জন্মভূমি,আজ তুমি ভালো নেই,
ওগো আমার মাতৃভূমি স্বদেশ।
অনুভব করি,তোমার হৃদয়ে গভীর ক্ষত, 
দু চোখ দিয়ে গঙ্গা বয়ে যায়।

কু চক্রীদের ছড়ানো বিষবাষ্পের তেজস্ক্রিয়তা,
খুন, ধর্ষণ, সুন্দরের সন্মান হানি,
নীরবে নিভৃতে দেখতে দেখতে
তোমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ।
কিন্তু না, হতাশ হইও না।
তাদের শত চেষ্টাএকদিন না একদিন ব্যর্থ হবেই।

যে দেশ রত্ন প্রসবিনী,
রবীন্দ্রনাথ,নেতাজি,দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের দেশ।
এই দেশে বসে নজরুল ইসলাম গেয়েছে,
তার কাব্যে, সংগীতে, সাম্যের মহাবানী।
দেশের সংবিধানের যিনি সার্থক রূপকার,
সেই মহাপুরুষ ভিমরাও আম্বেদকরকে
আপামর ভারতবাসী সবাই চিনি।

এখানে হিংসার নেই কোন স্থান।
দেশের সংবিধান দিয়েছে সবার সমান অধিকার।
কিন্তু আজ......
আকাশে ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা।
প্রকাশ্য রাজপথে পেশীশক্তির আস্ফালন।
বুভুক্ষু পেটে খিদের আগুন জ্বলে।
বাঁচার তাগিদে,খাদ্যের দাবীতে সোচ্চার,
শিশুরাও খাতা, কলম ছুঁড়ে ফেলে
দুবেলা একমুঠো ভাতের জন্য
মারণাস্ত্র নিয়েছে আজ সেই হাতে তুলে।

দেশের নেতা-মন্ত্রীরা প্রকাশ্য দিবালোকে
গনতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেই
শবদেহের উপর দুরন্ত গতিতে ছুটে যায়।
 নীচে চাপা পড়ে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।
এগিয়ে চলে অপ্রতিরোধ্য যজ্ঞের রথ।
ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার ফাটলের মাঝেই,
জিহ্বা লকলক করে কালনাগিনী,
সুযোগ সন্ধানী সাম্প্রদায়িক দল
খুজেঁ পাই হিংসা ছড়ানো নিত্য নতুন পথ।



দেশপ্রেমের জার্সি গায়ে, 
বিরুদ্ধ সুরকে দমিয়ে দিতে উদ্যত,
মেতে উঠেছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়, 
 সাজানো এনকাউন্টার মুছে দেই
 সিঁথির লাল টকটকে সিঁদুর।
ভোরের শিউলি ফুলর মতো ঝরে পড়ে, 
এক একটি তরতাজা যুবকের প্রান।

আমার প্রিয় মাতৃভূমি দেশ, 
আজ তুমি ভালো নেই।
হৃদয়ের তোমার গভীর ক্ষত,
অশ্রু সজল নয়ণ, জীর্ণ মলিন বেশ।
কিন্তু এখুনি নয় পরাজয়, 
চেয়ে দেখো, কালরাত্রি শেষ হয়েছে,
এগিয়ে আসছে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।
তবে কি আর নেই কোন ভয়?
রাত্রির অন্ধকার ভেদ করে উদিত হবে সূর্য, 
সত্যের হবেই একদিন জয়।

20 / 06 / 2017

অভাগী



হতভাগী মেয়েটির কেউ কোথাও নেই, 
সবাই গেছে যমালয়ে।
লোকে বলে বাপটা ছিল খুবই ভালো মানুষ, 
পাতলা,দুবলা খিনখিনে শরীর।
দোষের মধ্যে একটাই দোষ, 
সকাল থেকে হাড় ভাঙা খাটুনি, 
ক্লান্ত শরীরে টলতে টলতে প্রতিদিনেই ফিরত বাড়ি।

তবে একা কখনোই নয়, সাথে তার সাথী
হাতে মদের একটা বোতল।
প্রানপ্রিয় মদকে ভালবেসে তার বাপটা
যেই হৃদয়ে দিলো স্থান,
তারপর, তারপর কোন একদিন
হতভাগীর বাপটার চঞ্চল জীবনটা
মদের বোতলের মধ্যে আটকে গেল,
আর কোনদিনই সূর্যের আলো দেখল না ।

অভাগীর প্রস্ফুটিত ফুলের বয়স, 
সবেমাত্র একটি রঙীন বসন্ত গেছে কেটে।
মায়ের নরম কোলে জড়িয়ে বেড়ে উঠতেছিল,
একটু একটু স্নেহের পরশ পেয়ে।
কিন্তু হায়! বিধাতা সহিল না সুখ বেশিদিন।
হতভাগী মেয়েটিকে ঘরে কোনে ফেলে
জননী,যৌবনের স্রোতে গা ভাসিয়ে স্বপ্নরাজ্যে দিল পাড়ি।
হতভাগী চির অনাথ হল সেইদিন।

হতভাগী মেয়েটির এখন কেউ কোথাও নেই,
সবাই গেছে তাকে ছেড়ে অবহেলায় অনাদরে,
মাঝ সমুদ্রে জীবনতরী প্রবল ঝড়ে হাবুডুবু, 
সেই অভাগী তীরে উঠবে কেমন করে ?

ভয়ে তার বুক করে দুরুদুরু, 
প্রতিদিন জীবন সংগ্রাম হল শুরু।
পৃথিবী ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত,
মানুষের মানবিকতার লেশমাত্র নেই । 
আছে শুধু হিংসা, বিদ্বেষ, রক্তলোলুপ হিংস্র দৃষ্টি।
হতভাগী মেয়েটির কেউ নেই, 
হিংস্র পশুর মুখে অভগীকে ফেলে দিয়ে,
এই মানব সমাজ পেল কি মুক্তি ?
হায়! অভাগীর কেউ কোথাও নেই, 
কেউ কোথাও নেই,  কেউ নেই.....

15 / 06 / 2017

পকেট


ভরা পকেটে বসন্তের আগমনে
   জন সমুদ্রের জোয়ারে দুই কুল প্লাবিত,
      শোনা যায়, জীর্ণ কুটিরেও 
           সুমিষ্ট সুরে হরেক পাখির কলতান।

আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের ভীড়, 
    ভরা পকেটের মধ্যাকর্ষণ টানে, 
        মৌমাছির দল ফুলের মধু আহরণে,
            সৌরভে বিকাশিত ফুলের যৌবনের কালে।

ভরা পকেট যেই খালি, জন সমুদ্রে ভাটা,
    বন্ধু,বান্ধব সব বসন্তের কোকিল,
      বন্ধু একটু মিথ্যা বলি নাই, 
            খালি পকেটে আসল মানুষ চেনা যায়।

বসন্ত গেলে বসন্ত আসে, 
   আবার একটি বছর পরে,
           খালি পকেট কি আবার ভর্তি হয়,
               ভরা নদীর প্লাবন কমে গেলে? 

সুখের দিনে সবাই আসে, 
    প্রশংসার বিরাম নাই, 
         তিলকে পিটে তালও বানানো যায় ।
দুর্দিনের গন্ধ পেলেই জীর্ণ কুটির যেন ফাঁকা খেলার মাঠ।
        একদম মিথ্যা কথা নই ভাই, 
            খালি পকেটের ধারে কাছে করো টিকিও নাই ,
স্বার্থ ফুরাইলে একে একে সব কেটে পালায়।
        সত্যি বলছি ভাই, 
             খালি পকেটে আসল মানুষ চেনা যায় ।

স্বাধীনতা


মহাধুমধামে পালিত হয় দেশের স্বাধীনতা,
আমরা সবাই স্বাধীন,আর নেইকো পরাধীনতা। 
তবুও কোথাও যেন লাগছে, একটু আধটু খেদ,
দেশের নেতা,মন্ত্রীরা এই নিয়েই বাড়ায় মেদ।
স্বাধীনতা যে কি জিনিস বুঝিব কেমনে?
কি যে তার মূল্য? এখন ভাবছি মনে মনে।
জীবন মরন পণ করে,লড়েছিল যারা,
তারা কি কিছু পেয়েছিল?--গিয়েছিল মারা।
বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন,
কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে আজ------
সত্যিই কি আমরা স্বাধীন?

আজও অত্যাচারী দাপিয়ে বেড়ায় ভারতভূমি,,
শোষিত মানুষের দু:খে অশ্রু ঝরায় ভারতজননী।
দেশের স্বাধিনতা লাভের যারা ছিল ঘোরতর বিরোধী,
যাদের সেবায় তুষ্ট হতেন স্বংয় বৃটিশ মহারথী।
তাদের মুখেই শোনা যায় এখন দেশপ্রেমী বুলি,
আমরা যে কেমন স্বাধীন? তাদের কথায় চলি।
স্বাধীনতা পায় নি আজও দেশের বুভুক্ষিত সমাজ,
অন্যায়,অত্যাচারে জর্জরিত, কোনঠাসা তারা আজ।
যে দিন দেশের শ্রমজীবী মানুষ থাকবে না কেউ অভুক্ত,
সেই দিনই হবে গণতান্ত্রিক ভারতের স্বাধীনতার মূল্য যথার্থ। 

মানবতার সংকট



মানুষে মানুষে সমান অধিকার
বঞ্চিত করার নেই কারো অধিকার।
কি ধনী, কি দরিদ্র, সাম্যবাদে নেই ভেদাভেদ,
কিন্তু কোথায় ঘটছে সেই শৃঙখলে ছেদ।
সাম্প্রদায়িক রক্তলোলুপ শক্তি ঝাঁপিয়ে পড়ে
জীর্ণশীর্ণ শিকার সম দেশে।
মানুষে মানুষে কেনরে ভাই আজ ভুল বুঝা বুঝি?
রাস্তার মাঝে ঝরে মানবতার তাজা খুন।
ভাই ভাইয়ের সংগ্রামে,উন্মত্ত হিংসায় রণক্ষেত্র পৃথিবী,
এই কি মানবিকতার চেনা ছবি?

মানুষের কাছে মানুষেই আজ চরম শত্রু,
কেন রে ভাই এই বিশ্বাসহীনতা?
মানুষ কি তবে হিংস্র জীব?
মানুষ কি নির্দয়? দয়া মায়া হীন?
না,না, তা হইতো নই।
তাবে কেন মারামারি কাটামাটি
সামান্য বিষয়আশয় নিয়ে?
মানুষ কি তবে এতোই নিষ্ঠুরপ্রকৃতি.?
মানুষ কি পশুরও অধমাধম?
আজ কেন মাথায় ঘুরপাক খায় এই প্রশ্ন বাণ?
মানুষ মানুষের ভাই -- বলছি মুখে,
কার্যকালে আচরন করছি তার বিপরীতে।
পুর্ব আকাশে আজ ঘনিয়েছে ঘোর অন্ধকার মেঘ,
মানবতা আজ ভূলুণ্ঠিত ---
চিৎকার করে অন্ধকারে,দিক থেকে দিগন্তরে।


বন্দুকের নলেই জন্মে সন্ত্রাস


বন্দুকের নলেই জন্মে সন্ত্রাস...
সন্ত্রাসের ধংস বন্দুকের বাট।
রক্তেই লুকিয়ে আছে জীবন ,
কঙ্কালে জমা থাকে রক্তের দাগ।
ক্ষুধার্তকে  বুলেট দাও পেটে,
ক্ষমা নেই,প্রাপ্য  অধিকারে,
পশুরাজ শিখেছে ঘাস খেতে,
বুকের অনল জ্বলছে নীরবে।

বস্তার



উন্নয়নের রথের চাকায় পৃষ্ট হয়ে,
বস্তারের আদীবাসীরা পালিয়ে বাঁচে,
ছেড়ে দেয়,জঙ্গলের অধিকার।
'অপারেশন  গ্রীন্ট হান্টের অত্যাচারে'
ধর্ষিতা হতে হতে ভূমি সন্তানেরা হারিয়ে যায়,
বস্তারের পোড়া গন্ধের ধংসস্তূপের অন্তরালে।

পুঁজিপতি, শিল্পপতিদের বিকৃত লালসার শিকারে,
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অগুনে,
একে একে পুড়ে ধুলিসাৎ হয়ে যায়,
আধিবাসীদের মান,মর্যাদা, ইজ্জত,........
''সালওয়া জুড়ুম' আর মাওবাদী ধরার অভিযানে,
বস্তারবাসী আতঙ্কে কাঁদে, তাদের সর্বনাশে।
সিঙ্গুর,নন্দীগ্রাম,লালগড়,নেতাই,
গুজরাত,জম্মু-কাশ্মীর, বস্তার.....
হাড় হিম করা সেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কথা,
রক্ত দিয়ে লেখা থাকবেই সন্ত্রাসের ইতিহাসে।

মোমবাতিওয়ালা প্রতিবাদী  কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে,
মরচে ধরে মাটিতে মিশে যায়,
রক্তলোলু্প কাপুরুষজনোচিত হিংস্রতার ভয়ে.....
'আমরা পিঁপড়ের গর্তের মধ্যে লুকিয়ে পড়ি'।
সন্ত্রাসের রথের চাকা গড়িয়ে চলে,
অনন্তকাল ধরে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
বস্তারবাসী পড়ে থাকে সেই বস্তারেই
দু:খের অনলে পুড়ে অন্তরে অন্তরে।

তারা আজ অন্যায়,অত্যাচারে জর্জরিত, 
সাঁড়াশি চাঁপে লাঞ্ছনা,বঞ্চনার শিকার
আমরা কি কখনোও ফিরিয়ে দিতে পারি? 
বস্তারের আদিবাসীদের অরন্যের অধিকার। 



(প্রতিভা পত্রিকায় প্রকাশিত)

ভদ্রলোকটি



চৈত্র ,বৈশাখের তীব্র দাবদাহের আগুনে পুড়ে ছাই মন,
    পেঠের আগুন জ্বলে দ্বিগুণ, 
              চোখে ভেসে উঠে সরষে ফুল ।
জ্বলে না শুধু একটি পোড়া হৃদয় ।
      শোভা বর্ধন করে অভুক্ত শরীর, 
                 কঙ্কালসার পাঁজরের পদ্মফুল।

সূর্যকে মাথায় ধরে, হাতে ভাঙা থালা , 
  অর্ধ নগ্ন শরীরে সেই হাজার বছরের পুরোনো,
          ময়লা, তৈলাক্ত ছেঁড়া জামা ।
কোটরগত চোখ দুটো মনে হয় একমাত্র জীবিত ,
  ছলছল নয়নে,মৃদু স্বরে ডাক দিয়ে যায়
     ও দাদা,  ও দিদি....
          একটি টাকা আমায় দাওনা ?

চলন্ত গাড়ির মতো সবাই চলে যায়, 
   পাশ কাটিয়ে, না দেখার ভান করে, 
            স্কুল,কলেজ, অফিস, আদালতে।
  কাজ - কর্ম সম্পাদন করে সকলেই যায় ফিরে ,
      ব্যস্ততম পৃথিবীর আপন আপন ঘরে ।

দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো ভদ্রলোক টি
     প্রতিদিন বসেই থাকে, রাস্তার পাশে মাটি কামড়ে ,
তৈলাক্ত ছেঁড়া জামা, আর ভাঙা থালা ,
      ভালোবেসে, শুধু  যায় না তাকে ছেড়ে।

মাথার ঘাম মুছে ফেলে, ভদ্রলোক টি,
    আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলে, 
মানুষ আজ বড়ই স্বার্থপর, দয়ার নাই লেশ,
        আর কত দিন বুকের আগুন জ্বলবে ?
সভ্য সমাজের অমানবিক অত্যাচার, 
  নীরবে নিভৃতে সহ্য করে, আমি একদিন হবো নিঃশেষ ।



(আলোর দিশা,পত্রিকায় প্রকাশিত)


বুকের পাটা


যে যাই বলুক ভাই, 
   নেতা, মন্ত্রী, এমপি, দালালদের 
          সমালোচনা করতে গেলে ,
                   বুকের পাটা চাই। 

সমাজ থেকে শোষন  নির্মূল
   করতে গেলে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে
             প্রতিবাদ করতে গেলে,
                   সাম্যের সমাজ গড়তে হলে,
                           বুকের পাটা চাই।

স্বার্থপর সুবিধাবাদী মানুষ
    আজ কিববিল করছে ,
        নিজের নিজের আখের গুছিয়ে
                  ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকা ভরছে।
অনাহারে মরছে মানুষ,
    কেউ দেখার নাই।
       সত্যি বলছি ভাই, 
          গরীবের কথা বলতে গেলে, 
                 সর্বহারাদের নিয়ে লড়তে হলে
                         বুকের পাটা চাই।

ভোটের সময় হাজার হাজার
     প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি, 
          নেতাদের স্বভাবই এই
             ভোট নিয়েই কেটে পড়ি।
আমরা কোটি টাকার ইমারত গড়ি।
    একটু ভেবে দেখুন ভাই, 
      সাম্যের সমাজ গড়তে হলেও
           আমাদের বুকের পাটা চাই ।



বাল্য বন্ধু



বিস্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া
এক বাল্য বন্ধুকে খুঁজে পেলাম সেদিন,
মেদনীপুর রেলওয়ে প্লাটফর্মে।
উস্কো খুস্ক চুল,মুখভর্তি অবহেলিত দাড়ি। 
বহুকাল থেকে ক্ষুধার্ত, ক্লান্তিজনিত শরীর,
মনে নেই,তার নিজেরই ঠিকানা বাড়ি।
পরনে ছেঁড়া জামা,তৈলাক্ত প্যান্ট,
খালি দুটো ময়লা পা,চটি জুতো ছাড়া।

ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখি.....
শান্ত,নম্র,ভদ্র,মেধাবী ছেলেটা
কি করে হলো এমন ছন্নছাড়া।
বসন্তের এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে
লেগেছিল, প্রানে তার প্রেমের হাওয়া।
কত আশা,কত স্বপ্ন,হৃদয়ে জমা,
আকুতি, মিনতি শেষে হাতে পায়ে পড়া,
তবুও বাবা, মা সেদিন করেনি তাকে ক্ষমা।
অপমানে রাগে, দু:খে অভিমানে
চোখের জল মুছতে মুছতে হতভাগা
পাড়ি দেয় নিরুদ্দেশে.....
সেই দিন থেকেই হল ঘরছাড়া। 
তারপর জেগেছে কত বিনিদ্র রাত,
ক্ষুধার অনলে কেটেছে কত নিরম্বু উপবাস। 
ভাবি জীবনসাথি, বসন্তের কোকিল
সেও দিল ফাঁকি,ডুবল তরী,হারাল দুই কূল।

সেদিন প্লাটফর্ম জুড়ে লোকারণ্য,
কাছে ডেকে জড়িয়ে ধরে বললাম তাকে
কীরে?কেমন আছিস ওরে ভাই?
বড়ো,বড়ো চোখ দুটি করে ছল্ ছল্
বোধ হয়,আমাকে চিনতে পেরে,
বিড় বিড় সুরে বলে যায়,আপনার মনে,
"এই অসভ্য সমাজে বাঁচতে চাই না আমি...
দাদা,আমাকে ভুলে যাও দয়া করে।"

০৭/০৩/২০১৭

নায্য দাবী



দেশের রক্তচোষা,স্বৈরাচারী শাসকদের
চোখ রাঙানি সহ্য করতে করতে,
    শরীরের প্রতিটি কোষেই 
       তৈরি হয়েছে অ্যান্টিবডি। 
আমরা কারো ভয়ে ভীত নয়,
   যে রঙেরই থাকুক না সরকার। 
শাসকের চোখের উপর চোখ রেখে 
       নির্ভীক কন্ঠে বলে দিতে পারি------
         দিতেই হবে আমাদের নায্য অধিকার।

আমরা পশু নই, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব
    আমাদের চাই,অন্ন-বস্ত্র-উপযুক্ত বাসস্থান।
      ------এ আমাদের নায্য দাবী,
         কারো দয়ার দান নয়।
ক্ষুধিত, অভুক্ত, অসহায়
  মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে,
   মহান গণতান্ত্রিক দেশের
    নেতা,মন্ত্রী, দালালদের,
      প্রাসাদোপম ঘর বাড়ি তৈরী হয়।

গরিবের বুকের পাঁজরের উপর গড়ে ওঠে,
  একের পর এক সপিংমল,মাল্টিসেক্টর।
যারা গরীব, খেটে খাওয়া শ্রমিক,
      আছে শুধু তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার,
ভোট ভীখারিরা মনসদে বসেই,
   ভুলে যায়,তাদের প্রতিশ্রুতির কথা
      নায্য দাবী মানার চেয়ে------
         জনগনের উপর চালায় অন্যায়-অবিচার।
শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে হলেও
   আমরা ছিনিয়ে নেবই আমাদের নায্য অধিকার। 
     আমাদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের অসীম শক্তি,
        দেশের কি না কাজ করতে পারে?
         জনগণের হাতে কত ক্ষমতা জানে না তারা?
         দরকারে আমরা ভাঙতে পারি গড়তে পারি সরকার।

দেশের আইন মাকড়সার জাল



আমাদের দেশের এক আজব কাণ্ড কারখানা, 
যারা শ্রমিকের টুঁটি চিঁপে হত্যা করে,
তাদেরকেই আমরা মাথায় তুলে নাচি, 
দু হাত তুলে কীর্তন করি, গাহি জয়গান-----
খাল কেটে নিজেরাই কুমির ছানা আনি।
নেতাদের কথায় উঠি, আবার বসি, 
হায়! কত না আমারা নির্বোধ? 
বাবুদের নির্দেশ মান্য করে চলি।

নেতাদের জন্য রাজকীয়, এলাহি ব্যাপার, 
সাথে আবার এয়ার কাণ্ডিশেন গাড়ি।
আমারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে
ফসল ফলায়,দেশের সভ্যতা গড়ি।
তবুও বাবুরা দেই না উপযুক্ত দাম।
সরকার জারি করে নতুন নতুন ফরমান----
গরীব কে মারার নিত্য নতুন ফন্দি ফিকির!
বন্ধু,সারা দেশে ছড়িয়ে আছে তার প্রমান ।

যারা এক মুঠো ভাতের জন্য চুরি করে,
তারা দেশের আইনে জেলে পচে মরে।
আর যারা গরীবের তাজা রক্ত চুষে,
দেশের কোটি কোটি টাকা চুরি করে, 
তারাই আবার দেশের সরকার গড়ে।
আমাদের দেশের আইন মাকড়সার জাল, 
সেই জালে রাঘর বোয়ালরা ধরা পড়ে না
চুনো পুঁটিরা সহজেই আটকে পড়ে।
বিজয়মাল্যরা জাল ছিঁড়ে বিদেশ পালায়,
তবে,মাকড়সার জাল সর্বহারাদের মারণ ফাঁদ।
গরীবের মাথায় হাত বুলিয়েই দেখো ভাই, 
 দেশের নেতা,মন্ত্রীরা পাই স্বর্গের স্বাদ।

আমি এক শৈশব হারানো মেয়ে



ওগো আমার  হারানো বন্ধুরা
শুনে যাও মনের কথা বলি--
আমি এক শৈশব হারানো মেয়ে।
মা-বাবার অভাবের সংসারে জন্ম নিয়েছিলাম,
কি কুক্ষণে! এক অন্ধকারময় সকালে।
সেদিন বাড়ির কারো মুখেই হাসির ছোঁয়া নেই,
যেমনটি হয় বাড়ির কেউ প্রিয়জন মারা গেলে।

আস্তে আস্তে বড় হলে লাগলাম প্রকৃতির কোলে,
বাড়ির সকলের অনাদর, লাঞ্ছনা, ঘৃণা
আর অবহেলাকে সঙ্গে নিয়ে,
আমরা যখন পাঁচ বছর পূর্ণ হল,
আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমিও ভর্তি হয়েছিলাম---
গ্রামের পাঠশালায় গিয়ে।
অ-আ দিয়ে শুরু করলাম শিক্ষার হাতেখড়ি
খুব মনযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে
আশায় আশায় ফিরতাম প্রতিদিন আমি বাড়ি।

বাবা একদিন বলেছিল,
আমরা হলাম গরীব মানুষ।
লেখাপড়া করে কি যে হবে?
মেয়ে মানুষের লেখাপড়া ভাল জিনিস নয়,
তোমাদের লেখাপড়ার কে যে দাম দেবে?
সমাজের চাপে,বাড়ির চাপে

লেখাপড়ায় ইতি টানলাম বন্ধু
খুব অল্প বয়সে।
মা-বাবার সাথে কাজ করতাম,
সেই তখন থেকে ক্ষেত-খামার মাঠে।
বিধাতা আমাদের জন্ম দিয়েছে নাকি
কর্ম করে, গতর খাটাই খাতে।
কি আর করবো? বাসন মাজা,কাপড় কাচা,
বাবুদের বাড়ির উচ্ছিষ্টভোজনে দিনগুলি আমার কাটে।

ভেবেছিলাম লেখাপড়া শিখব আমি
জানব বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের জানা অজানা অনেক কিছু।
মনের আশা মনেই থাকলো বন্ধু---
হঠাৎ একদিন চললাম স্বামীর পিছু পিছু।
বই খাতা যা ছিল সব কিছুই দিলাম বিলি করে,
অল্প বয়সে বিয়ে হলো,চললাম বন্ধু শ্বশুর ঘরে।

(প্রতিভা পত্রিকায় প্রকাশিত)

ভালো পাত্র



মা মরা মেয়েটি স্বপ্নেও ভাবে নি, 
এত অল্প বয়সে তাঁর বাবা দেখছে বর।
কাঠখড় পুড়িয়ে সামনের রবিবারই বিয়ে,
লেখাপড়া ছেড়ে, যেতেই হবে শ্বশুর ঘর!

খবরটা শুনে বারো বছরের মেয়েটির 
মাথায় আছড়ে পড়ে মস্ত আকাশ।
দিশাহারা, অবিরাম ঝরে অশ্রুধারা, 
নাওয়া, খাওয়া নাই, নিরম্বু উপবাস।

খবরে প্রকাশ, নারীশিক্ষা,নারীশক্তি, 
নারীমুক্তি,নারীর অধিকারের ইতিহাস।
বাস্তবের মাটিতে মেয়েরা আজও অসহায়,
চোখের সামনে ঘটছে, নারীর সর্বনাশ।

খুন, ধর্ষন, শ্লীলতাহানী, নারী নির্যাতন, 
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিত্য দিনের ঘটনা।
বাবার পা ছুঁয়ে করুণ সুরে মেয়েটি বলে----
বিয়ে চাই না, এখন করবো পড়াশোনা।

ছলছল দু নয়নে বলে, জোরেই বিয়ে দিলে, 
তোমার মেয়ে মরবে, করবেই আত্মহত্যা।
আদর করে  বুকের মাঝে রাখত ধরে,  
আজ যদি থাকতো, মেয়েটির অন্তর্যামী মাতা।

কিন্তু কে শোনে ছোট্ট মেয়েটির কথা? 
তাঁর বাবা অনড়, এমনই নাছোড়বান্দা।
বলে, এমন সুদর্শন, কর্মঠ ভালোপাত্র,
মেয়ের বাবা কখনোই করবে না হাতছাড়া।

এই ভাবে হাজারো প্রতিভা হারিয়েছে অন্ধকারে,
ফুল না ফুটটেই অকালেই তারা পড়েছে ঝরে।
ভালো পাত্রের অজুহাতে মেয়েরা গুরুত্বহীন 
বাবা মায়ের কড়া হুঙ্কারে মেয়েরা প্রতিদিনই মরে।

মানুষ,নেই কি আজ ধরাধামে?


মানুষ নেই কি আজ ধরাধামে?
চারদিকে আছে শুধু স্বার্থের রাজনীতি,
পার্টি,গোষ্ঠী,বর্ণ,জাতির হুঙ্কার।
আজও বিচারে বানী নির্ভৃতে কাঁদে,
শক্তিশালী ধর্ষকের আস্ফালনে-----
তাই জানতে খুব ইচ্ছে করে,
মানুষ নেই কি আজ ধরাধামে?

দেখিতে পাই,রোগাক্রান্ত মরণাপন্ন রোগীর
বেড নেই সরকারী হাসপাতালে,
তবুও বেড পাই,বড়োলোকের পোষা সারমেয়টি।
মানুষের মূল্যবোধ কি আজ এতোই নীচে?
তাই জানতে খুব ইচ্ছে করে,
মানুষ নেই কি আজ ধরাধামে?

আছে শুধু খেটেখাওয়া, শ্রমজীবী মানুষ গুলোকে
নিয়ে রাজনীতিবিদদের পাশাখেলা। 
গরীবের বুকের উপরে পা দিয়ে রক্ত চোষে,
কালো টাকার মালিক হওয়া।
আজও নেতা,মন্ত্রীরা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে
পুতুলের মতো বাম হাতে নাচায়,
তাই জানতে খুব ইচ্ছে করে
মানুষ নেই কি আজ ধরাধামে?


লৌহমানবী ও গনতন্ত্র


মণিপুরের লৌহমানবী ইরম শর্মিলা চানু
   বিধানসভা নির্বাচনে 90টি ভোট পেল ।
জনগণের জন্য যার জীবনটাই উৎসর্গ ,
    দীর্ঘ 16 বছরের অনশন কি মাঠে মারা গেল? 

বিশ্ব মানবতার মূর্ত প্রতীক, 
     এক ডাকে ,যাকে গোটা পৃথিবী চেনে ,
তার শোচনীয় পরাজয় কি গনতন্ত্রের সাজে ?
     নির্বাচন কি শুধু টাকার খেলা ?
        ধর্মের নামে রাজনীতির সুড়সুড়ি ? 
              নেতারা কি সত্যিই ভোট কেনে ?

যিনি মহান, শান্তির জন্য বিশ্বের মানুষ,
   সসম্মানে তাকে দেয় নানা পুরস্কার ।
যাদের ভালোবাসে, আপন ভেবে
      দান করলো তার অমূল্য জীবন কাল ।
ধন্যি, দেশের মানুষের প্রতিদান ?
     সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ তাকেই করে প্রত্যাখান ।

দেশের গনতন্ত্র আদৌ কি জীবন্ত আছে? 
    না,নেই । যদি থাকে তবে.....
গনতন্ত্র বিত্তশালীদের হাতে বন্ধক রাখা আছে ।
      ইরম শর্মিলা চানু দেশকে যা দিয়েছে, 
দুর্নীতিতে হাবুডুবু যে নেতা, সে কি দিতে পারে ?
      তবুও অর্থের কাছে, ধর্মীয় উদ্দামতার কাছে
দীর্ঘ 16 বছরের অনশনও হার মানে ।

এই পরাজয় ইরম শর্মিলা চানুর একার নয়, 
      এ পরাজয়, গনতন্ত্রের, বিশ্ব মানবতার,
সমাজের এগিয়ে থাকা মানুষের পরাজয় ।
     গনতন্ত্রের আকাশে আজ উদিত ঘন কালো মেঘ, 
ইরম শর্মিলা চানু হেরে গেলেও
       শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা এগিয়ে এলে
একদিন না,একদিন হবে সত্যের জয় ।
13 / 03 / 2017

ষোড়শী মেয়েটা



দূর্গা নাম জপতে জপতে ষোড়শী  মেয়েটা,
ঘর থেকে মহানন্দে বেরিয়ে গেল।
গাজনের মেলা,পড়ন্ত বিকেল,
সূর্যের রামধনু রং যেন
ষোড়শীর অব্যক্ত  রূপের প্রকাশ। 

রাত্রির শেষ লগ্নে, অপেক্ষারত বাবা,মা
রাত্রির নীরবতা ভেঙে সূর্যোদয় হল,
তবুও মেয়েটি আর বাড়ি ফেরে নি।
হাজার হাজার লোকের লোকারণ্যে,
ষোড়শী মেয়েটা কোথায় হারিয়ে যায়।
পাড়া,প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে,
তন্ন,তন্ন করে খানাতল্লাশীর পর-----
থানা,পুলিশ,প্রশাসন,সবাইকে জানানো হল।
কিন্তু মেয়েটির কোন সন্ধান নেই।

সপ্তাহ খানেক পর গ্রামের জঙ্গলেই
উদ্ধার হয়,ষোড়শীর পচাগলা দেহ।
মাছি ভন ভন করছে নিথর শরীরে।
পুলিশি ময়নাতদন্তের পরে জানা যায়,
কয়েকজন নর পিশাচ ফুলের মধু চুষে,
ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল,জঙ্গলে মেয়েটাকে।

সেদিন গোটা গ্রামে উনুন ধরে না,
চঞ্চল,গ্রামটা যেন বোবা,নিস্তব্ধ।
বর্বর,পৈশাচিক অত্যাচারের প্রতিবাদে,
বুদ্ধিজীবিরা রাজপথে একটাও মোমবাতি জ্বালায় নি সেদিন।
গরীব মেয়েটিকে কেই বা স্মরণ করে?
যতোই হোক না সে বুদ্ধিমতী মেয়ে।
বড়োলোকের বকাটে, মদমাতাল কেউ হলে,
সে কি আর কান্ড মশাই---
রাজপথে বুদ্ধজীবীরা মোমবাতি হাতে
টি,ভিতে চ্যানেলে চ্যানেলে ,বিচার চাই,বিচার--
তর্ক বিতর্কের ঝড়ে তুফান তোলে।
না,এই ষোড়শী মেয়েটার বিচার কেউ চাই নি।

মেয়েটির মা চোখের জল মুছে বলেছিল,
আমরা গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই।
আমরা সব সইতে পারি....
কিন্তু বিচারের নামে প্রহসন সইতে পারি না।
না,আমি আমার মেয়ের বিচার চাই না।
আমরা গরিব,বড়োলোকের হাতের পুতুল,
নায্য বিচার আমরা কখনোই পাই নি।

মেরা ভারত মহান



ভারত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ
সকলের সমান আধিকারে,
একথা শুনে পাগলেরও হাসি পাই,
কালো টাকার ঝাপসা অন্ধকারে।
সন্তানের মতো পালন করে যারা জমি
সেই কৃষাণ দের ঋণে ডুবিয়ে মেরে,
বিজয়মাল্য, নীরব-ললিত মোদীদের
জামাই আদরে সরকার দেয় ছেড়ে।

ভন্ড যারা,কালোবাজারির ব্যবসায়ী
তাঁরায় কিন্তু ভাই, দেখো সরকার গড়ে,
বৃদ্ধ,বৃদ্ধা,প্রতিবন্ধীরা টাকার অভাবে
ব্যাঙ্কের লাইনে রৌদ্রে দাঁড়িয়ে মরে।

"উত্তরপ্রদেশের দেবরাজ সিং'' মেয়ের বিয়েতে
ব্যাঙ্কের দরজায় হন্যে হয়ে ঘুরে,
"বিজেপি নেতা,জনার্দন রেড্ডি", মেয়ের বিয়েতে
বাতিল নোটে পাঁচশো কোটি টাকা খরচ করে।
দেশ বিদেশে উড়ছে কালো টাকা
এন,জি,ও আর মন্দিরের দান ফান্ডে।
ভারতে গরীব মানুষের মৃত্যু মিছিল
গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রির কান্ডে।

কালো টাকা উদ্ধার হোক----
দেশের সব মানুষের মুখের কথা,
সুইস ব্যাঙ্কের কালো টাকা উদ্ধারে
নেতা মন্ত্রীদের কেনো নেই মাথা ব্যথা?
"চোরে চোরে মাসতুতো ভাই"
সুবিধাবাদী রাজনীতির গেঁড়াকলে,
গরীবলোকের জীবন নিয়ে সরকার
ছিনিমিনি খেলেই চলেছে তলে তলে।

১৭/১১/২০১৬