শনিবার, ১ আগস্ট, ২০২০

আমি এক শৈশব হারানো মেয়ে



ওগো আমার  হারানো বন্ধুরা
শুনে যাও মনের কথা বলি--
আমি এক শৈশব হারানো মেয়ে।
মা-বাবার অভাবের সংসারে জন্ম নিয়েছিলাম,
কি কুক্ষণে! এক অন্ধকারময় সকালে।
সেদিন বাড়ির কারো মুখেই হাসির ছোঁয়া নেই,
যেমনটি হয় বাড়ির কেউ প্রিয়জন মারা গেলে।

আস্তে আস্তে বড় হলে লাগলাম প্রকৃতির কোলে,
বাড়ির সকলের অনাদর, লাঞ্ছনা, ঘৃণা
আর অবহেলাকে সঙ্গে নিয়ে,
আমরা যখন পাঁচ বছর পূর্ণ হল,
আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমিও ভর্তি হয়েছিলাম---
গ্রামের পাঠশালায় গিয়ে।
অ-আ দিয়ে শুরু করলাম শিক্ষার হাতেখড়ি
খুব মনযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে
আশায় আশায় ফিরতাম প্রতিদিন আমি বাড়ি।

বাবা একদিন বলেছিল,
আমরা হলাম গরীব মানুষ।
লেখাপড়া করে কি যে হবে?
মেয়ে মানুষের লেখাপড়া ভাল জিনিস নয়,
তোমাদের লেখাপড়ার কে যে দাম দেবে?
সমাজের চাপে,বাড়ির চাপে

লেখাপড়ায় ইতি টানলাম বন্ধু
খুব অল্প বয়সে।
মা-বাবার সাথে কাজ করতাম,
সেই তখন থেকে ক্ষেত-খামার মাঠে।
বিধাতা আমাদের জন্ম দিয়েছে নাকি
কর্ম করে, গতর খাটাই খাতে।
কি আর করবো? বাসন মাজা,কাপড় কাচা,
বাবুদের বাড়ির উচ্ছিষ্টভোজনে দিনগুলি আমার কাটে।

ভেবেছিলাম লেখাপড়া শিখব আমি
জানব বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের জানা অজানা অনেক কিছু।
মনের আশা মনেই থাকলো বন্ধু---
হঠাৎ একদিন চললাম স্বামীর পিছু পিছু।
বই খাতা যা ছিল সব কিছুই দিলাম বিলি করে,
অল্প বয়সে বিয়ে হলো,চললাম বন্ধু শ্বশুর ঘরে।

(প্রতিভা পত্রিকায় প্রকাশিত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন