মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০

কন্যা সন্তান

 কন্যা সন্তান

By জামাল আনসারী

রত্নাদেবী ঘুম থেকে উঠে সকালবেলা কাঠের পিঁড়িতে বসে শীতের রোদ পোহাতে পোহাতে শালপাতার চুরুট টানিতেছিল। যেই মাত্র অন্তঃপুরের সূতিকাগৃহ হতে খবর পেল ছোট বৌমা আবার একটি কন্যা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে, সেই মাত্র হাতে ধরা জলন্ত চুরুট টি মাটিতে পড়ে গেল।পড়ে গেলেও চুরুট থেকে তখনও ধোঁয়া বেরুচ্ছে। সেই উড্ডিয়মান ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে, মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে বিরক্তির সুরে বলিল,  "আবার কন্যা সন্তান!"
ভাবখানা এমন যেন কন্যারা মানুষ নয়।
তারপর মনের সুখে ছোট বৌমার উদ্দেশ্যে গালি দিতে লাগিলেন, "পোড়ামুখী !এর পেটে শুধু মেয়েই আছে!ছেলে নাই ।আর একটা হলেই এক গন্ডা পূর্ণ হবেক।"
মুক্ত হরিণকে আড়াল থেকে কোনো ব্যাধ তীর নিক্ষেপ করে বিদ্ধ করিলে, হরিণের যেমন যন্ত্রণা হয় ,তেমনি শাশুড়ির কথাগুলি অন্তঃপুরে সদ্য কন্যা সন্তানের জননী সীতার বুকে এসে বিঁধল।

তবুও সীতা কোন প্রতিবাদ করিল না ।মুখ বুজে সব সহ্য করিল।গায়ে জড়ানো মলিন কাপড়ের একটি খুঁট ধরে দুই চোখের জল মুছে বলিল, "হে ঠাকুর!আমি কি ইচ্ছা করে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছি?  কন্যার জন্ম দেওয়া কি অপরাধ? তুমি ন্যায্য বিচার করো ঠাকুর।"

যে সদ্যজাত  কন্যা সন্তান কে কেন্দ্র করে রত্নাদেবীর সদা হাস্য রত মুখটা এখন পাংশু, বিবর্ন। সেই ফুটফুটে কন্যাটি মায়ের বুকে নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে ভাবছে, এই পৃথিবীটা মনে হয় তার মায়ের মুখের হাসির মতোই সুন্দর ও পবিত্র।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন