শনিবার, ১ আগস্ট, ২০২০

মানবতা



মানুষ নাই রে ভাই,মানবিকতা নাই,
আছে শুধু স্বার্থের চোখে ঠুলি।
আর আছে বুলেট বিদ্ধ কঙ্কালের বুকফাটা আর্তনাদ।
কলেজার টুকরো যে আমার আপন ভাই,
কথায় বলে, "পিঠের ভাই,গাঁঠের সোনা"
তারই তাজা রক্তে আজ খেলছি হোলি।
কিছুই আজ আর অবশিষ্টাংশ নাই,
অজ্ঞাতসারেই মানবতার কফিনে 
শেষ পেরেক টুকু নির্দয়ে মারি,
আমরা তাই আজ সভ্যতার পিছনের দিকে চলি।

টাকার উপরে রাজপ্রসাদ বানায়,
বাস্কবন্দি টাকা নিয়েই আকাশে দিই পাড়ি
ক্ষুধিত মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে,
নায্য আধিকারে বঞ্চিত করেই,
সর্বহারাদের বুকে সজোরে মারি লাথি
আমরা এখন ফুটপাতের ভিখারি গড়ি।

মনুষ্যত্ব আজ পশুত্বের কাছেই পরাজিত
লজ্জায় রাখে নিজের মুখ ঢাকি,
মৌলবাদী দের হুঙ্কারে পৃথিবী কম্পমান।
অস্ত্রের প্রতিযোগিতায়,মানবতা ভীত সন্ত্রস্ত,
 সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তীব্র আস্ফালনে,
পৃথিবীর ঘোর সংকটপূর্ণ অবস্থা এখন।
 কি করে বাঁচি! শ্যাম রাখি না কূল রাখি,
আমরা তাই সভ্যতার পিছনের দিকে হাঁটি।

মানবতা আজ ধর্ষিত দিকে দিকে,
রক্তলোলুপ শক্তি ধরেছে গলা টিঁপে
আপনচক্ষু মেলে একটু দেখুন দেখি,,
শুধুমাত্র সংসারের অভাবের জ্বালায়,
লিখাপড়া শিঁকোয় তুলে দিয়েই,
দুটো কাচা টাকা রোজগারে আশায়,
কত মেধাবী ছাত্রছাত্রী কলকারখানায়,
চায়ের দোকানে,বেকারী শিল্পে,
বড়োলোকের বাড়িতে বেগার খাটে।
কত তরতাজা জীবন অভাবে অঙ্কুরেই যায় ঝরে?
মানবতার চোখের সামনে মানবতার অপমৃত্যু ঘটে।
কেউ কি কোনদিন তার হিসেব লিখে রাখে?
তবুও আকাশে সেই লাল সূর্যটা স্বমহিমায় ওঠে।

অবাধ লুন্ঠনের রাজত্বে সংখ্যাগুরুই আজ ডাকাত।
মানুষের লোভের কোনো সীমাপরিসীমা নাই।
সকালে পাখির সুমিষ্ট ডাকে ঘুম ভেঙে দেখি,
চৌরাস্তার মোড়ে পড়ে আছে বেওয়ারিশ লাশ।
হয়তো সে সত্যের মূর্ত প্রতীক,
জীবন্ত মানবতা,অকুতোভয় বীর সৈনিক।
লোকে লোকারণ্য, চারপাশ ঘিরে চিৎকার চেঁচামেচি...
মাঝখানে রাস্তায় উপর শুয়ে আছে নিথর রক্তাক্ত দেহ।
সাহায্য, সহযোগিতার কোন বালাই নাই,
শুধু জিরাফের মতো ঘাড় উঁচু করে আমরা সবাই দেখি,
সমাজে আমরা আজ বোবা,কালা,হয়ে বেঁচে আছি।

বাবা মায়ের নি:স্বার্থ ভালোবাসায় ছোঁয়ায়,
লেখাপড়া শিখে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত একমাত্র ছেলে,
তবুও একমুঠো ভাত থেকে বঞ্চিত মা-বাবা
আজও বৃদ্ধাশ্রম অঝোরে কাঁদে সেই জন্মদাতা।
লাঠি ধরে জীর্ণদেহে বৃদ্ধ দম্পতি এক পা,দু পা হাঁটে,
ছেঁড়া কাপড়ে কত অপূর্ন স্বপ্ন চোখের জলে মুছে।
মানুষ নাই রে ভাই,মানবিকতা নাই
মানবিকতা হয়তো বন্দি হয়ে আছে,
কোটিপতিদের তালা দেওয়া বদ্ধ ঘরে।

দুর্নীতির কালো পাহাড়ে মানবিকতাপ্রতিনিয়ত চাপা পড়ে।
বাঁধা থাকে অফিসের লাল ফিতের ফাঁসে,
মানবতা,আজ অসহায়,নিরুপায়
নির্জনে বুক চেপে ডুঁকরে ডুঁকরে কাঁদে,
বন্ধুকের নলের সামনে নতজানু তরতাজা যুবক,
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে বলির পাঁঠা।
মুছে যায় হাজার হাজার সিঁথির সিঁদুর,
অনাথ,অগুনতি দুধের শিশুর শৈশব।
মানবিকতা পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে,
কাঁটাতারের দুর্ভেদ্য বেড়াজালে,
আজও মৃত লাশের বুকের ওপর
নির্মম শোষনের বুলডোজার চলে।

একটা কথা শুনে রাখো ভাই,,
মানুষের একটাই ধর্ম হওয়া উচিত, মানবতা
হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কখনও নয়, 
আমার ধর্ম সেই মহান মানবতা, 
সত্য কথা বলতে আমি আজও কুণ্ঠিত নয় ।

বিভেদের প্রাচীর তুলে ধর্মের ষাঁড়েরা করে হানাহানি, 
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে তাই শুধু মারামারি হয় ।
মানতে চাই না তারা কোন যুক্তি তর্কের কথা,
ধর্মই বিভীষিকাময়,সজোরে মানবতার উপর মারে লাঠি,
ভয়ে ভয়ে আমরা তাই সভ্যতার পিছেনের দিকে হাঁটি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন