বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০

উত্তরপ্রদেশের দলিত কিশোরী মনীষা বাল্মীকি কি ন্যায্য বিচার পাবে??

 মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে উত্তরপ্রদেশের ভোগী(বেশির ভাগ সচেতন ভারতীয় নাগরিক তাই বলেন) আদিত্যনাথ কতখানি যোগ্য তা আজ দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার । তবুও যারা এখনও গোমূত্রের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে দিবানিদ্রায় মগ্ন, তারা দেখতে পাবে না। কারণ তারা নিশাচারী। তাদের গোপন কাজকর্ম (কুকর্ম) সফল করতে রাতের অন্ধকারেই উপযুক্ত। 


মাত্র কয়েক বছরের সুশাসনে গোটা উত্তরপ্রদেশটাকেই যোগী রাম রাজ্য বানিয়ে ফেলেছে। ভারতের ক্রাইম রেকর্ড বলছে, গোটা ভারতের মধ্যে যোগীর রাজ্য নারী ধর্ষণের মুক্তাঞ্চলে পরিনত হয়েছে। ধর্ষণের রাজধানী। আর হবেই না কেন?  রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় বড় বড় নেতাদের আশীর্বাদে বেড়ে ওঠে এক একজন গ্যাংস্টার। সত্যি বলতে এই গ্যাংস্টার রাই রাজনৈতিক দলের মেরুদন্ড। তারাই হচ্ছে যত কুকর্মের নাটেরগুরু।


কিছু কিছু ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেই, তখন জানা যায়,ফল্গুধারার মতো দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি কতদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ঊনিশ বছরের দলিত তরুণী মনীষা বাল্মীকির ধর্ষণের ঘটনা তারমধ্যে একটি। এটাকে শুধুমাত্র ধর্ষণের ঘটনা বললে হবে না। তরুণী বোনটির প্রতি অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বীভৎস, ভয়াবহ ছিল যে সোশাল মিডিয়া বা টিভিতে শুনে কোনও সুস্থ নাগরিক স্থির থাকতে পারবে না।  জানা যাচ্ছে এই ধর্ষণের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের চারজন উচ্চবর্ণের ছেলে জড়িত। যে নামগুলো প্রকাশ্যে এসেছে, সেই কুলাঙ্গাররা হল,লবকুশ, সন্দীপ, রবি আর রামু। তারা চারজনই ধর্ষণের পর প্রমান লোপাটের চেষ্টা করেছে। তাই তারা প্রথমেই ঠান্ডা মাথায় দলিত কিশোরী মনীষা বাল্মীকিকে  হত্যা করে। জিভ পর্যন্ত কোনো ধারালো অস্ত্রের দ্বারা কেটে ফেলে। ধর্ষকদের পাশবিক নির্যাতনে মেয়েটির কন্ঠনালী প্রচন্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেষে পনেরো দিন পর বেঁচে থাকার লড়াইয়ে  হার মানেন মনীষা বাল্মীকি। 


এমন নিকৃষ্টতম ধর্ষণের ঘটনায় গোটা দেশ অপরাধীদের বিচার চেয়ে উত্তাল।  সবাই দোষীদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি চাই।  হ্যাঁ আমিও চাই। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি। অনেকে বলেন, দেশে কঠিন আইন আনতে হবে। তবেই ধর্ষণ কমবে। নির্ভয়া কাণ্ডের পর নতুন আইন তৈরি হল। কিন্তু ধর্ষণের সংখ্যা কমে নি।তাই আইন এনে কিছুই হবে না। দরকার মানসিকতা পরিবর্তন।তবে আমার ব্যক্তিগত মত, ধর্ষণের মতো জঘন্যতম কাজে জড়িতদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কাজ হবে না।তাদের প্রকাশ্যে অন্ডকোষ সমেত লিঙ্গ কেটে ফেলতে হবে। তবেই যদি কিছু কাজ হয় তো হবে।


আসল নাটক শুরু হল এরপর। আমরা যতই শাস্তি চাই, শাস্তি চাই বলে চিৎকার করি না কেন! যারা অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার অধিকারী। তারা কোনো এক অদৃশ্যে আঙ্গুলি নির্দেশে  অপরাধীদের আড়াল করার জন্য আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। কারন তারা উচ্চবর্ণের। তাই গোদি মিডিয়া চুপ। আইটি সেল চুপ। শাসকের কাছে বুদ্ধি বন্ধক রাখা বুদ্ধিজীবীরা চুপ।কারন দোষীদের মধ্যে একজনের নামও মুসলিম নেই। জটিল ভগাংশের অংক না কোষলেও তারা জানে এতে তাদের লাভ নেই। তাই হৈ চৈ করে প্রতিবাদ করে কি হবে? হায় রে বুদ্ধিজীবী!!


অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সুপার ভিকরান্ত ভির তার তদন্ত করে তার রিপোর্ট এ জানিয়েছে, মনীষা বাল্মীকিকে আদৌ ধর্ষণ করা হয়নি। কারন মেয়েটির শরীরে কোনরূপ ধর্ষণের বা শ্লীলতাহানির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাছাড়া মেয়েটির জিভ নাকি কেটে ফেলা হয়নি ।সেটি অক্ষত আছে।  মেরুদন্ডও নাকি ভেঙে যায় নি। বাহ্ রে বাহ্ পুলিশ সুপার!!


এতকিছু জানার পরেও অপরাধীদের কঠিন শাস্তি চাইছি।তবে ঐ যে ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। আমারও ভয় হয়, কি জানি  মনীষা বাল্মীকি ন্যায্য বিচার পাবে কিনা! কারন টাকার কাছে, ক্ষমতার কাছে ন্যায্য বিচার পাওয়ার আশা এই পোড়া দেশে খড়কুটোর মতো ভেসে যায়।


তবুও আশা রাখতে হয়।একদিন দোষীদের শাস্তি হবেই।

#justiceformanishabalmiki

©জামাল আনসারী

01/10/2020



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন