শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২

ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও কিছু কথা

 

ভারতীয় যুক্তরাষ্টীয় কাঠামোর রাষ্ট্রপতি পদটির গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হলেন রাষ্ট্রপতি। শাসন বিভাগের শীর্ষে রাষ্ট্রপতির অবস্থান। সংবিধানের ৫৩ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতেই ন্যস্ত থাকবে। তিনি নিজে কিংবা তার অধস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসনক্ষমতা প্রয়ােগ করেন। তিনি একাধারে শাসন বিভাগের প্রধান, অন্যদিকে আইন বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।এবং তিনিই ভারতের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।


ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেখা যায় যে, এই রাষ্ট্রপতি পদটিতে যারা আসীন হয়েছেন, তারা সকলেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন, তাদের শিক্ষা দীক্ষা পান্ডিত্য নিয়ে কারো  কোনো সন্দেহের অবকাশ ছিল না। একটা সময় ছিল যখন একমাত্র শিক্ষিত ,সমাজ সচেতন নাগরিকদের এই মহান পদে বসানোর রেওয়াজ ছিল। ভারতের এই রাষ্ট্রপতি পদ অলঙ্কৃত করেছেন―রাজেন্দ্র প্রসাদ,সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ,ড:জাকির হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মহম্মদ হিদায়েতুল্লা(অস্থায়ী),ভি ভি গিরি,ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ,আর ভেঙ্কট রামন,কে আর নারায়ণন,এ পি জে আবদুল কালাম,প্রতিভা পাটিল,প্রণব মুখোপাধ্যায়।


 ভারতের রাষ্ট্রপতি পদটির মান সম্মানকে এক উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যেতে তারা সক্ষম হয়েছিলেন।ভারতে তো বটেই বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে এনাদের নামের খ্যাতি, কর্মের খ্যাতি শুনতে পাওয়া যায়। 


কিন্তু যখন থেকে রাষ্ট্রপতি পদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কম গুরুত্বপূর্ণ বা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বসানো হল, তখন থেকেই রাষ্ট্রপতি পদটির গুরুত্ব ম্লান হতে শুরু হয়েছে। ভারতের প্রথম দলিত রাষ্ট্রপতি হলেন রামনাথ কবিন্দ। খুবই সম্মানীয় ব্যক্তি। তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি কি রাষ্ট্রপতি পদটির সেই অতীত মান সম্মান বজায় রাখতে পেরেছেন?? ভারতের বুকে ঘটমান নানা সমস্যা নিয়ে তিনি একদিনেও কি সংবাদিকের মুখোমুখি হয়েছেন?? সমস্যার সমাধান নিয়ে তিনি কি একটাও বিবৃতি দিয়েছেন?? 


তিনি এতো বড় একটা পদে বসে তিনি দেশের মানুষের জন্য কি করেছেন! রাষ্ট্র যখন নানা অজুহাতে আদিবাসী, দলিত, সংখ্যালঘু মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, দমন-পীড়ন চালিয়েছে, ঘর- বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে। তখন দলিত রাষ্ট্রপতি রামনাথ কবিন্দ একবারের জন্যেও সেই সব অত্যাচারিত মানুষের পাশে কি দাঁড়িয়েছে ?? না। তিনি কখনও তাদের পাশে দাঁড়ায় নি। সরকারের চাটুকারিতা করতেই পাঁচ বছর কেটে গেছে। জনগণের অভাব অভিযোগ শোনার সময়ই তিনি পান নি। 

ভারতের আদিবাসীদের জল,জমি জঙ্গলের অধিকার যখন সরকার ক্ষমতায় জোরে কেড়ে নিচ্ছে, দেশের কৃষকদের হাতে না মেরে যখন ভাতে মারার জন্য তিন তিনটি কালা আইন এনেছিল, তখনও রামনাথ কবিন্দের মুখে একটিও শব্দ বের হয়নি। কেন??  


আসলে সরকার  চাই, রাষ্ট্রপতি পদে এমন লোক বসুক,যে সরকারের আজ্ঞাবহ হবে, সরকার যা বলবে রাষ্ট্রপতি তাই করবেন।রাষ্ট্রপতি হবেন সরকারের হাতের পুতুল। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে রামনাথ কবিন্দ পাঁচ বছর  কাজ করার পর অবসর নিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও এটাই সত্যি যে, বিদেশের কথা আমি ছেড়েই দিলাম, আমাদের ভারতের 99%  মানুষ উনার নামেই আজ পর্যন্ত শুনেই নি। 


এবার নাকি ভারতের রাষ্ট্রপতি পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে চলেছেন, দ্রৌপদী মুর্মু।  দেখা যাক, তিনি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, কতটুকু কাজ করেন।


 তিনি কি ভারতের রাষ্ট্রপতি পদটির অতীতের গৌরবময় ইতিহাস, হারানো মান- সম্মান ফিরিয়ে আনতে পারেবেন?  তিনি কি ভারতের আদিবাসী মানুষের জল,জমি,জঙ্গলের অধিকার ফিরিযে দিতে পারবেন?  ভারতের বুকে আদিবাসী, দলিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে, তা কি দ্রৌপদী মুর্মু কঠিন হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন?? 

দেখা যাক, এই সব প্রশ্নের উত্তর  সময়ই একদিন বলে দেবে।


রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আগাম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাখি। ভারতের প্রতিটি মানুষ আপনার প্রতি অনেকে আশা,আকাঙ্খা ,প্রত্যাশা নিয়ে আগামী দিনের পথ চলার দিকে তাকিয়ে আছে।


©জামাল আনসারী 

20/07/2022



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন